অসহায়: আগুন লাগার পরে কোনও ক্রমে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন অন্তঃসত্ত্বা কল্পনা সর্দার। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
কেউ সাইকেল ভ্যান চালান। কেউ অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। তবুও একচিলতে ঘরের নীচে শান্তিতে শয়ানে কোনও বাধা ছিল না। জীবনও চলছিল হাসিমুখেই। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়লেন নেতাজিনগর কলোনির বাসিন্দারা। শীতের রাতে আশ্রয় শিবির আর দানের কম্বলই আপাতত তাঁদের সম্বল। আর কবে সরকার ঘর তৈরি করে দেবে সে দিকে চেয়ে থাকা।
বিধ্বস্ত চেহারায় কথা বলছিলেন ৭৪ বছরের শঙ্কর সর্দার। ভ্যানে মালপত্র চাপিয়ে পৌঁছে দেন বিভিন্ন জায়গায়। দুই ছেলে, পুত্রবধূ, নাতিনাতনিদের নিয়ে তাঁর অভাবের সংসারেও আনন্দ ছিল। কিন্তু এ দিন সবই গিয়েছে আগুনের গ্রাসে। শঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘আমি উচ্চ রক্তচাপের রোগী। কত ক্ষণ আর সুস্থ থাকব জানি না। ছেলেও ভ্যান চালায়। এতগুলো মানুষ এর পরে কী করে বেঁচে থাকব জানি না। মাথারউপরের ছাদটুকুই চলে গেল। ব্যাঙ্কের কাগজপত্র, বিমার কাগজপত্র সব পুড়ে গিয়েছে।’’
তাঁর ঘরের অদূরেই একটি ঘরে এ দিন আগুন লাগে বলে শঙ্করবাবু জানান। তাঁদের ধারণা, রান্না করতে গিয়েই ওই বাড়িতে আগুন ধরে যায়। শঙ্করবাবুর স্ত্রী মায়াদেবী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘বেরিয়ে আয়, বেরিয়ে আয়, ডাক শুনে কোনও মতে বাড়ির বাইরে একটি ফাঁকা জায়গায় পৌঁছে দেখি ঘরে আগুন লেগে গিয়েছে। নিজেদের প্রাণটুকু ছাড়া আর কিছুই নিয়ে বেরোতে পারিনি।’’
আরও খবর: ভোটের আগে রাজ্যে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার পুলিশ নিয়োগ: পার্থ
আরও খবর: আইন ফিরিয়ে নিন! প্রধানমন্ত্রীকে রক্তে লেখা খোলা চিঠি পাঠালেন কৃষকরা
কলোনির বাসিন্দা কল্পনা সর্দার অন্তঃসত্ত্বা। তিনি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন সময় মতো আগুনের নাগালের বাইরে চলে আসতে পেরে। তবুও তাঁর আতঙ্ক কাটেনি। ভিড়ের মাঝে তাঁকে ধরে রেখেছিলেন আরও কয়েক জন মহিলা। তাঁদের কথায়, ‘‘এই শরীরে শীতের রাতে মেয়েটাকে কত কষ্ট সহ্য করতে হবে এখন।’’
সুমিত্রা দাস, ঊর্মিলা হালদারেরা কলোনির উল্টোদিকে সল্টলেকে পরিচারিকার কাজ করতে যান। তাঁদের কথায়, ‘‘অনেক অভাবের মধ্যেও দিনের শেষে বাড়ি ফিরে দেখতাম বাচ্চাগুলো হাসছে। সব ওলট-পালট হয়ে গেল।’’ শীতের রাতে দগ্ধ কলোনিতে এখন শ্মশানের স্তব্ধতা।