যার জেরে মঙ্গলবার তীব্র যানজট হয় মা উড়ালপুল ও সংলগ্ন এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
চালু হওয়ার সাড়ে তিন বছরের মাথায় গড়িয়ামুখী র্যাম্প বন্ধ রেখে শুরু হয়েছে মা উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। যার জেরে বাংলা নববর্ষের দ্বিতীয় দিনে যানজটের কবলে পড়ল ই এম বাইপাস এবং মা উড়ালপুল দিয়ে চলাচলকারী অসংখ্য যানবাহন।
পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাত থেকে মা উড়ালপুলের গড়িয়ামুখী র্যাম্প দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে ওই রাতে তেমন অসুবিধা না হলেও মঙ্গলবার সকালে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে সায়েন্স সিটি সংলগ্ন এলাকার যান চলাচল। ব্যস্ত সময়ে প্রায় থমকে যায় চিংড়িঘাটামুখী গাড়ির গতি। শ্লথ হয়ে যায়
পার্ক সার্কাসের দিক থেকে মেট্রোপলিটনের দিকে যাওয়া গাড়ির গতিও। বাইপাসের উপরে লম্বা গাড়ির সারি দেখতে পাওয়া যায় বেলা ১২টা পর্যন্ত। পরে ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে অবস্থা সামাল দেওয়া হলেও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছিল পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড় থেকে মা উড়ালপুলে ওঠা গাড়ি চলাচল। ওই সমস্ত গাড়িকে দরগা রোড দিয়ে ঘুরিয়ে পার্ক সার্কাস কানেক্টরে পাঠানো হয় বেশ কিছু সময় ধরে। পরে অবশ্য ওই নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া হয়। আগামী ১২ দিন উড়ালপুলের ওই অংশ বন্ধ রাখা হবে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
লালবাজার জানিয়েছে, ২০১৫ সালের অক্টোবরে ওই উড়ালপুলের উদ্বোধন করা হয়। সেটির গড়িয়া র্যাম্পের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেএমডিএ-র তরফে দু’সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছে। তার প্রেক্ষিতেই সোমবার রাত থেকে ওই র্যাম্পে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কেএমডিএ-র তরফে জানানো হয়েছে, পরমা মোড়ে উড়ালপুলের ওই র্যাম্পের উচ্চতা মাটি থেকে প্রায় ২০ মিটার। তাই দ্রুত বেগে গাড়ি চললে কোনও দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য আগেই ওই র্যাম্পের ‘বেয়ারিং’ পাল্টে তা শক্তপোক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি এ নিয়ে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা। তার পরেই সোমবার রাত থেকে বারো দিনের জন্য ওই র্যাম্পের যান চলাচল বন্ধ করে তা ছেড়ে দেওয়া হয় নির্মাণকারী সংস্থার হাতে। ওই সংস্থাই মা উড়ালপুল তৈরি করেছিল। কেএমডিএ সূত্রের খবর, ওই র্যাম্পের বেয়ারিং বদলের আগে একটি করে প্ল্যাটফর্ম তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। ওই নির্দেশ মেনেই কাজ শুরু হয়েছে।
কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানান, কিছু দিন আগেই ওই উড়ালপুলটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, বেয়ারিং-এর ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা নেই। এমনকি, গোটা ‘মা’ উড়ালপুল নিয়ে যে সমীক্ষা হয়েছে, সেই রিপোর্ট থেকেও জানা গিয়েছে, ওই উড়ালপুলের স্বাস্থ্য ঠিক আছে। তবে যানবাহনের চাপ বেশি হওয়ায় ভবিষ্যতের কথা ভেবেই গড়িয়া র্যাম্পের বিভিন্ন পুরনো বেয়ারিং পাল্টে তার ধারণক্ষমতা আরও বাড়ানো হচ্ছে।
এ দিন সকালে সায়েন্স সিটিতে গিয়ে দেখা যায়, বাইপাসে উত্তরমুখী গাড়ির লাইন পৌঁছে গিয়েছে ভিআইপি বাজার পর্যন্ত। উল্টো দিকে মা উড়ালপুলের যানজট চলে গিয়েছিল তপসিয়া মোড় পর্যন্ত। পুলিশের দাবি, ওই র্যাম্প যে বন্ধ রাখা হবে, তা জানিয়ে এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলে পোস্টার দেওয়া হলেও তা মানতে চাননি বহু চালক। এ দিন তাঁদের অনেকেই মা উড়ালপুল দিয়ে এসে গড়িয়া র্যাম্প ধরতে চাইলে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ওই গাড়িগুলিকে সোজা পাঠিয়ে দেয় উড়ালপুল দিয়ে মেট্রোপলিটনের দিকে। আর তাতেই যানজট তৈরি হয় বাইপাসের ওই অংশে।
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, মেট্রোপলিটনের ওই অংশে উড়ালপুল এবং তার নীচ দিয়ে প্রচুর গাড়ি চলে আসায় প্রাথমিক ভাবে সামাল দিতে অসুবিধা হয়। সেই সঙ্গে গড়িয়ামুখী গাড়ি ‘ইউ টার্ন’ করায় বাধা পায় পথের গতি। যার জেরে যানজট ছড়িয়ে পড়ে পার্ক সার্কাস কানেক্টর এবং ইএম বাইপাসের দক্ষিণ অংশে। তবে বেলা বারোটার পরে অবস্থার উন্নতি হয়। স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।