হা-পিত্যেশ: বিশ্বকর্মা পুজোয়ে দেখা নেই বাসের। অপেক্ষায় যাত্রীরা। সোমবার, রবীন্দ্র সদনের মোড়ে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিন গণপরিবহণ আদৌ মিলবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা ছিলই। সোমবার সকাল থেকে সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। পথে বেরিয়ে ভোগান্তির মুখে পড়লেন অসংখ্য মানুষ। সকালের ব্যস্ত সময়ে অন্যান্য দিন যে বাসের জন্য পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়, এ দিন সেই বাসই চলেছে ২০ মিনিট বা আধ ঘণ্টা পর পর। অনেকেই বাসের আশা ছেড়ে মেট্রো, ট্যাক্সি বা অ্যাপ-ক্যাবে চড়া ভাড়া গুনে অফিসের পথ ধরেছেন। সব মিলিয়ে দিনভর অন্ত ছিল না ভোগান্তির।
এ দিন সকাল থেকেই শহরে ছিল উৎসবের মেজাজ। বিভিন্ন বেসরকারি রুটের বাসমালিক ও কর্মীরা মিলে পাড়ায় পাড়ায় পুজোর আয়োজন করেছিলেন এ দিন। ফলে, রাস্তায় নেমেছিল খুবই কম সংখ্যক বাস। তার মধ্যে অধিকাংশই আবার ব্যস্ত সময় কেটে যাওয়ার পরে যাত্রীর সংখ্যা কমতেই রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যায়। সেই কারণে বিকেলের দিকে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও খারাপ। ওই সময়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে আরও বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়েন বহু মানুষ। বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে এ দিন অধিকাংশ কলকারখানা বন্ধ থাকলেও সরকারি অফিস ছিল খোলা। বহু বেসরকারি অফিস ও স্কুলেও ছুটি ছিল না। তাই সকাল থেকে নিত্যযাত্রীদের যথেষ্টই ভিড় ছিল রাস্তায়। অফিসে যাওয়ার সময়ে কোনও মতে বাস পেলেও ফেরার সময়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় অনেককেই।
শহরের বিভিন্ন বেসরকারি বাসমালিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালের দিকে রাস্তায় ৩০ শতাংশ মতো বাস নেমেছিল। বিকেলের দিকে যা অনেকটাই কমে যায়। ফলে বিকেলের দিকে ভোগান্তি বাড়ে। এ দিন সন্ধ্যায় রুবি মোড়ে উল্টোডাঙার বাস ধরতে দাঁড়িয়ে ছিলেন একটি শপিং মলের কর্মী মৌসুমী দাস। তাঁর কথায়, ‘‘আধ ঘণ্টা হয়ে গেল, কোনও বাস নেই। আসার সময়েও একই রকম অবস্থা হয়েছিল। আজ কখন বাড়ি ফিরতে পারব, জানি না!’’ সকালের দিকে এসএসকেএম হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসে একই রকম ভোগান্তির কথা শোনালেন মধু পাল। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসক আমাকে আটটার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছতে বলেছিলেন। ভোরে বেরিয়ে ট্রেনে করে শিয়ালদহে পৌঁছে গেলেও সেখান থেকে বাস পেতে প্রবল ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। শেষে কিছু না পেয়ে ট্যাক্সিতে করে হাসপাতালে আসি।’’ বিকেলের দিকে ভোগান্তির চিত্রটা ছিল আরও ভয়ঙ্কর। বারাসত থেকে সপরিবার নিউ মার্কেটে পুজোর কেনাকাটা করতে এসেছিলেন সুবীর মিত্র। তিনি বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম, ফাঁকায় ফাঁকায় বাজারহাট সেরে নেব। তাই এসেছিলাম। কিন্তু ফেরার বাস পেতে যে এতটা ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে, তা ভাবিনি।’’ এ দিকে, বাসের আকাল দেখে ঝোপ বুঝে কোপ মারতে দেখা গিয়েছে ট্যাক্সিচালকদের। বহু ক্ষেত্রেই তাঁরা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা অতিরিক্ত চেয়েছেন বলে অভিযোগ।
রাস্তায় যে এ দিন বাস কম ছিল, তা মেনে নিয়েছে বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনগুলি। ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটো সাহা বলেন, ‘‘এ দিনটায় বাসকর্মীরা কোনও শাসনের ধার ধারেন না। ছুটির মেজাজে থাকেন। মালিকেরা চাইলেও তাঁরা বাস নিয়ে রাস্তায় নামতে চান না। জোর করলেও লাভ হয় না।’’