প্রবল জনমতের চাপেই কি ‘ডিপ্লোমা ডাক্তার’ তৈরির পরিকল্পনা থেকে কার্যত পিছু হটল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর? প্রতীকী ছবি।
প্রবল জনমতের চাপেই কি ‘ডিপ্লোমা ডাক্তার’ তৈরির পরিকল্পনা থেকে কার্যত পিছু হটল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর?
গত সোমবার, ১৫ মে ওই বিষয়ে তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সব সদস্য একমত হয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রশিক্ষণে ডিপ্লোমা ডাক্তার নয়। ডাক্তারের সমতুল্য কোনও পদ তৈরি করা যাবে না। অথচ, গত ১১ মে মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য দফতরকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তিন বছরের প্রশিক্ষণ দিয়ে ডিপ্লোমা ডাক্তার তৈরি করা যায় কি না, তা দেখতে। কিন্তু, ক’দিনের মধ্যেই দফতরকে কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যেতে দেখে অনেকেই মনে করছেন, জনমতের চাপে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। কারণ, নবান্নের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কোনও প্রস্তাব দিচ্ছেন, সেখানে বিশেষজ্ঞ কমিটি তার উল্টো কথা বলছে যে, এমনটা করা যায় না। অতীতে এই নজির খুব বেশি দেখা যায়নি বলেই মত প্রবীণ চিকিৎসকদের।
এ প্রসঙ্গে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে স্বাস্থ্য ভবন। এক স্বাস্থ্যকর্তার মতে, “এমবিবিএস ডাক্তারের সমান্তরালে নতুন ডাক্তার পদ তৈরি করা যে ঠিক হবে না, সেটা বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকেই সকলে সহমত হয়েছেন।” প্রসঙ্গত, ১২ মে স্বাস্থ্য দফতর ওই বিষয়টি দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। তার বিজ্ঞপ্তি থেকে ‘ডিপ্লোমা ডাক্তার’ শব্দবন্ধ বাদ দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছিল ‘হেলথকেয়ার প্রফেশনাল’। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পেশাদার। ১৫ জনকে নিয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রত্যেকেই চিকিৎসক। স্বাস্থ্য শিবিরের একটি অংশের ব্যাখ্যা, কমিটির সকলেই চিকিৎসক হওয়ায় তাঁরা সমান্তরাল আরও একটি ডাক্তার পদকে সমর্থন করবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।
‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার কথায়, “গ্রামের ডাক্তার, শহরের ডাক্তার এমন ভেদাভেদ জনগণ চায় না। তাই জনমতের চাপ রয়েছেই। ইচ্ছে মতো ডাক্তার বানানোর আইনত স্বীকৃতিও নেই।” তিনি আরও জানাচ্ছেন, ডাক্তারির ক্ষেত্রে দেশের নিয়ম ও আইন ভাল করেই জানেন বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যেরা। তাই তাঁরাও যে এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারবেন না, সেটা নিশ্চিত ছিল। পাশাপাশি তাঁর দাবি, রাজ্যে চিকিৎসকের অভাব নেই। মানসের কথায়, “চিকিৎসক নিয়োগে খামতি রয়েছে। প্রয়োজনে মেডিক্যাল কলেজেও ক্যাম্পাসিং হোক।”
আবার ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের দাবি, “চাপে পড়েই কমিটি ডিপ্লোমা ডাক্তার নয়, হেলথকেয়ার প্রফেশনাল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্যাডার রয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য ডাক্তার সেই সব পদে পাশ করে বেরোচ্ছেন। কিন্তু নিয়োগ হচ্ছে না।” তাঁর আশঙ্কা, “হেলথকেয়ার প্রফেশনালের নামে দলীয় লোকজনকে ডাক্তার খেতাব পাইয়ে দেওয়া হবে।”
ডিপ্লোমা ডাক্তারের প্রস্তাব অবাস্তব পরিকল্পনা ছিল বলেই মত প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রেরও। তাঁর কথায়, “নতুন সহায়ক তৈরি না করে, বর্তমান স্বাস্থ্য সহায়কদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক।” তিনি জানান, এক সময়ে ‘ফিজ়িশিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স’ চালুর পরিকল্পনা করেছিল স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়। তেমন কিছুও করা যেতে পারে বলে তাঁর মত।