ট্যাক্সি চালাতে চালাতেই ধূমপান। ধর্মতলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
আইন আছে। তবু শহরের পথেঘাটে ধূমপান বন্ধ হয়নি। এ বিষয়ে তামাক-বিরোধী এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বক্তব্য, নজরদারির অভাবেই এই আইনকে এখনও ঠিকমতো বলবৎ করা যায়নি।
জনস্থানে (পাবলিক প্লেস) তামাকজাত পণ্যের প্রচার এবং প্রকাশ্যে ধূমপান রোধে ২০০৩ সালে তৈরি হয়েছিল ‘সিগারেট অ্যান্ড আদার টোবাকো প্রোডাক্টস অ্যাক্ট’ (কোটপা)। সেই আইনের চার নম্বর ধারায় প্রকাশ্যে ধূমপান নিয়ে বিধিনিষেধের কথা বলা রয়েছে। কিন্তু ১৬ বছর পরেও এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা গেল না কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যেরা। তাঁরা বলছেন, অফিস চত্বর, হাসপাতাল বা শহরের রাস্তায় তো বটেই, গাড়ি বা মোটরবাইক চালানোর সময়েও সুখটানে কোনও বিরাম নেই। পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগাতেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ধূমপায়ীরা যেন ‘চলছে, চলবে’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন।
ধর্মতলার মোড়ে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্যাক্সি। আলো লাল থেকে সবুজ হওয়ার মুহূর্তেই পকেট থেকে তামাকজাত দ্রব্য বার করে নেশায় মজে গেলেন চালক। ফড়িয়াপুকুর সিগন্যালেও দেখা গেল, ওই ভাবে আইনকে তোয়াক্কা না করে সিগারেটে টান দিচ্ছেন এক বাইক-আরোহী। কাছেই ট্র্যাফিক পুলিশের কিয়স্ক। তবু পরোয়া নেই।
তামাক-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, আইন লঙ্ঘনের ছবিটা পাল্টাতে গেলে আইনে কী রয়েছে, আগে সেটা ভাল করে জেনে নেওয়া জরুরি। তার জন্য সচেতনতামূলক প্রচারের প্রয়োজন। ওই সমাজকর্মীদের প্রশ্ন, ‘‘কোনও চালক গাড়ি চালানোর সময়ে মোবাইলে কথা বললে তাঁর ছবি তুলে পুলিশকে পাঠানোর আবেদন করা হচ্ছে। গাড়ি চালানোর সময়ে ধূমপান করা নিয়ে এ ধরনের কোনও প্রচার নেই কেন?’’
‘গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে’ (গ্যাটস)-র ২০১৬-’১৭ সালের সমীক্ষা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে প্রকাশ্যে ধূমপানের কারণে ২২.৫ শতাংশ মানুষ নিজেরা ধূমপায়ী না হওয়া সত্ত্বেও পরোক্ষ ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তামাক-বিরোধী প্রচারের কাজে যুক্ত ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গাড়ি চালানোর সময়ে ধূমপানে অন্যের জীবনকেও বিপদে ফেলা হচ্ছে। গাড়ি বা বাইক চালানোর সময়ে মোবাইলে কথা বললে মনঃসংযোগে যেমন ব্যাঘাত ঘটে, ধূমপানের ক্ষেত্রেও তা-ই। তা ছাড়া, তামাকজাত পণ্যের অবশিষ্টাংশ অনেকেই রাস্তায় ফেলে দেন। ওই অংশ থেকেও দূষণ ছড়ায়।’’ যদিও পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের একাংশের মতে, গাড়ি চালানোর সময়ে ধূমপানের সঙ্গে মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটার কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তাঁদের জানা নেই।
পরিবেশ দফতরের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, প্রকাশ্যে ধূমপান রুখতে আইন চালু হওয়ার পরে তা কার্যকর করতে পরিবেশ দফতর কয়েক জন অফিসারকে নজরদারির কাজে নামাবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। কিন্তু তা খুব একটা কার্যকর হয়নি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘শুধু নজরদারি চালালে হবে না। সেই সঙ্গে ধরা পড়লে আইন লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপও জরুরি। রেল যেমন স্পট ফাইনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে ধূমপান রোধে অনেকখানি সফল হয়েছে। আরপিএফের মতো কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।’’ পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকেরও মত, ‘‘যাত্রীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে সরকারি বাসচালকদের ক্ষেত্রেও স্টিয়ারিংয়ে বসে ধূমপানে বারণ রয়েছে। রাস্তাঘাটে গাড়ি চালানোর সময়ে কেউ ধূমপান করছেন কি না, তা দেখা পুলিশের দায়িত্ব।’’
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘সচেতনতার প্রচার সব সময়ে স্বাগত। তবে এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপের কথা এখনই পরিকল্পনায় নেই।’’