লন্ডভন্ড: ঝড়ে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে কাপড়। মঙ্গলবার, ঠাকুরনগরে। নিজস্ব চিত্র
আমপানের রাতে ঘরের চাল উড়ে যাওয়ায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে ত্রাণশিবিরে উঠেছিলেন ঠাকুরনগরের মহিষাকাটির সন্ধ্যা বিশ্বাস। সোমবার দেখা গেল, ওই শিবির প্রায় ফাঁকা।
ঘর নেই, খাবার নেই, জামাকাপড়-বইপত্র কিচ্ছু নেই। তা হলে শিবির ছাড়লে কেন? সন্ধ্যাদেবীর নাতনি, ক্লাস ফোরের অনুরাধা ফিসফিস করে বলে, ‘‘ওখানে কেউ মাস্ক পরছিল না। এক ঘরে ঠাসাঠাসি। যদি করোনা ধরে নেয়?’’
দমদম থেকে শুরু করে ঠাকুরনগর— প্রায় একই ছবি সর্বত্র। মাথায় ছাদ বা ঘরে দানাপানি না থাকলেও করোনার ভয়ে শিবির ছাড়ছেন আমপান-বিধ্বস্ত উত্তর ২৪ পরগনার বহু দুর্গত। এক-একটি ঘরে ঠাসাঠাসি ভিড় ছিল শিবিরগুলিতে। সেই কারণে সংক্রমণের আশঙ্কাও ছিল মারাত্মক।
ঠাকুরনগরের আদিবাসী-অধ্যুষিত আনন্দপাড়ায় ঘর বলতে একটিও আস্ত নেই। তা সত্ত্বেও সেখানে ভিটে আগলে পড়ে ৪২ ঘর আদিবাসী মানুষ। ভিটে বলতে এখন মেঝেটুকুই। আয়লার সময়েও ত্রাণশিবিরে উঠেছিলেন বাদল মণ্ডল। তিনি বললেন, ‘‘করোনার ভয়ে শিবিরে যেতে রাজিই হল না কেউ।’’
ওই সব এলাকায় গিয়ে সোমবার শুকনো খাবার ও মঙ্গলবার খিচুড়ি খাইয়েছেন বারাসতের নীলাংশুক, দমদমের গৌর বা ঠাকুরনগরের আশিসেরা। ঘর নেই কারও, তাই পথেই পাত পেড়ে খাওয়া। গরমে দরদর করে ঘামছেন সকলে। তবু বৃষ্টি চায় না আনন্দপাড়া। বৃষ্টি হলেই ছেলেপুলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ভেজা ছাড়া গতি নেই।
তাই এই সময়ে একটু খাবার আর পানীয় জলের পাশাপাশি কয়েকটি তাঁবু চান ওই দুর্গতেরা। জেলা প্রশাসন অবশ্য এ দিন জানিয়েছে, ইতিমধ্যে আড়াই লক্ষেরও বেশি তাঁবু জেলার সমস্ত ব্লক ও পঞ্চায়েত থেকে বিলি করা হয়েছে। আনন্দপাড়া-সহ বেশ কিছু এলাকার মানুষ অবশ্য জানালেন, তাঁরা কেউ তাঁবু পাননি। মঙ্গলবার রাতে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী ফোনে জানান, দুর্গতদের মধ্যে তাঁবু, পানীয় জল, খাবার ও অন্য ত্রাণসামগ্রী বিলি করা হয়েছে।