পথের নিয়ম বজায় রাখতে কড়া যানশাসন

রাতের রাস্তায় পুলিশ নেই। আইল্যান্ডের সামনে সিগন্যালে লাল আলো জ্বলছে। পর পর তিনটি গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে গেল। এ দিক-সে দিক কোনও গাড়িও নেই। কিন্তু গাড়িগুলি তবু দাঁড়িয়ে ট্র্যাফিক সিগন্যাল সবুজ হওয়ার অপেক্ষায়। বিদেশের রাস্তা নয়, এ দৃশ্য খাস সল্টলেকের।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৫
Share:

রাতের রাস্তায় পুলিশ নেই। আইল্যান্ডের সামনে সিগন্যালে লাল আলো জ্বলছে। পর পর তিনটি গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে গেল। এ দিক-সে দিক কোনও গাড়িও নেই। কিন্তু গাড়িগুলি তবু দাঁড়িয়ে ট্র্যাফিক সিগন্যাল সবুজ হওয়ার অপেক্ষায়।

Advertisement

বিদেশের রাস্তা নয়, এ দৃশ্য খাস সল্টলেকের। বিধাননগরের কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহের কথায়, ‘‘পুলিশ না থাকলেও সল্টলেকের ভিতরে ৯০ শতাংশ গাড়িই এখন ট্র্যাফিক নিয়ম মেনে চলছে।’’ তিনি নিজে রাতে সাদা পোশাকে দাঁড়িয়ে থেকে এই প্রবণতা লক্ষ্য করে দেখেছেন বলে জানালেন কমিশনার।

সল্টলেকের বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধুর কথায়, ‘‘সল্টলেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গাড়ির মালিক নিজে গাড়ি চালান। শিক্ষিত, ভদ্র এই নাগরিকদের মধ্যে সাধারণত আইন মেনে চলার প্রবণতা রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বেতনভুক চালক বা বয়সে যুবাদের মধ্যে আইন ভাঙার প্রবণতা থাকে। সেই সংখ্যাও সল্টলেকে তুলনায় কম।’’

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখ সিটি সেন্টারের কাছে একটি বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক অটোচালক ও সেই অটোর এক যাত্রীর। তার পর থেকে সল্টলেকের প্রধান প্রধান আইল্যান্ডে ২৪ ঘণ্টাই সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করেছে পুলিশ। বসছে সিসিটিভি। গাড়ির চালকেরা সিগন্যাল মানছেন কি না, তা দেখতে মাঝেমধ্যেই নজর রাখছে পুলিশও। কমিশনার নিজেও রাস্তায় নেমে দেখেছেন। কমিশনারের কথায়, ‘‘হাতে গোনা যে কয়েকজন এই সিগন্যাল মানছেন না, এ বার ধরা হবে তাঁদেরও।’’

তবে একটি বিষয়ে গাড়িচালকেরা এখনও নিয়ম ভাঙছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। কোনও ব্লকের গলি থেকে বেরিয়ে ডান দিকে যেতে গেলে নিয়ম অনুযায়ী বাঁ দিকে গিয়ে ইউ টার্ন করে আসার কথা। কিন্তু তা না করে গলি থেকে বেরিয়ে ডান দিকে ঘুরে একটু আগে ডিভাইডারের কাটা অংশ দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন চালক। কুমারবাবুর কথায়, ‘‘এই দোষে দুষ্ট গাড়ির মালিক, চালক সকলেই। এই প্রবণতা কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না।’’

২৩ অক্টোবর এ ভাবে উল্টোমুখে যাওয়ার সময়ে সল্টলেকের সিডি ব্লকে একটি দুর্ঘটনায় আহত হন এক বাইকচালক। তাই বিধাননগর পুলিশ ঠিক করেছে, সল্টলেকে এ ধরনের যত ডিভাইডারে কাটা রয়েছে, সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে। আপাতত পুরনো গার্ডরেল দিয়ে ওই কাটআউট বন্ধ করা হচ্ছে। তবে পাকাপাকি ভাবে ওই কাটআউট বন্ধ করতে বিধাননগর পুরসভার সঙ্গেও পুলিশের কথা হচ্ছে।

সল্টলেকে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান দু’টি কারণ হিসেবে নেশা করে গাড়ি চালানো এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানোকেও দায়ী করছে পুলিশ। প্রথমটির বিষয়ে ইতিমধ্যেই সল্টলেকের বিভিন্ন জায়গায় সন্ধ্যার পরে ‘ব্রেথ অ্যানালাইজার’ যন্ত্র নিয়ে গাড়িচালকদের পরীক্ষার কাজে নেমেছে পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেটের হাতে এই মুহূর্তে আটটি এমন যন্ত্র রয়েছে। আরও ১০টি নতুন যন্ত্র আনানো হচ্ছে। পুলিশ কর্তারা জানাচ্ছেন, রাতে আরও বেশি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে দেখা হবে চালকের আসনে যিনি বসে রয়েছেন, তিনি নেশা করে রয়েছেন কি না। এ ধরনের ঘটনায় সম্প্রতি প্রায় ৬০ জনকে আটক করে সারা রাত থানায় বসিয়ে তবে ছেড়েছে পুলিশ।

এ দিকে, গাড়ির গতি কমাতে দু’টি আইল্যান্ডের মাঝে এ বার গার্ডরেল বসানোর তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। সল্টলেকে মোট ৬৪টি আইল্যান্ড রয়েছে। দু’টি আইল্যান্ডের মাঝে এবং কাটআউট বন্ধ করার জন্য এখন প্রায় ১ হাজার গার্ডরেলের প্রয়োজন বলে জানা গিয়েছে। প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের বিজ্ঞাপন-সহ এই গার্ডরেল বসানোর পরিকল্পনা শুরু হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement