ফাইল চিত্র।
ফাঁকা স্কুলগাড়ির জানলা দিয়ে ক্ষীণ গলার কান্নার আওয়াজ পেয়ে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন এক পথচারী। তাঁকে দেখেই হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি অনুরোধ করে তাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে। এমন পরিস্থিতিতে পড়ে খানিক হতভম্ব ওই পথচারী চিৎকার করে গাড়ির চালকের খোঁজ করতে থাকেন। খানিক বাদে সেই চালক ও তাঁর সহকারী এলে পথচারী ঘটনাটি তাঁদের জানান। শিশুটিকে স্কুলে পৌঁছে দেবেন বলে জানান তাঁরা।
নিউ টাউন স্কুলের সাত-আট বছর বয়সি ওই ছাত্রীকে শুক্রবার টেকনো সিটি থানার অধীন আঠারোতলা এলাকায় স্কুলগাড়িতে বসে কাঁদতে দেখেন নিউ টাউনেরই বাসিন্দা বৌধায়ন ঘোষ। ঘটনার কথা ফেসবুকে নিউ টাউনের আবাসিকদের একটি গ্রুপে লেখেন তিনি। তার পরেই এ নিয়ে নড়াচড়া পড়ে। বিকেলের পরে টেকনো সিটি থানার পুলিশ ঘটনার খবর পেয়ে স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, ওই স্কুলগাড়িটি শিশুটিকে স্কুলে পৌঁছে দিয়েছে। পরে সে নিরাপদে বাড়িও পৌঁছে যায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই চালক জানিয়েছেন, স্কুলের সামনে পড়ুয়াদের নামানোর সময়ে অন্য একটি গাড়ি পিছন থেকে লাগাতার হর্ন দিচ্ছিল। তাই বাচ্চাদের নামিয়ে গাড়িটি ওই জায়গা থেকে সরে যায়। তাড়াহুড়োতেই তাঁরা খেয়াল করেননি যে, একটি শিশু ভিতরে রয়ে গিয়েছে। চালক ও সহকারী দাবি করেন, ওই গাড়িতে শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী যিনি ছিলেন, তিনিও বিষয়টি খেয়াল করেননি।
বৌধায়ন জানান, শিশুটি স্কুলগাড়ির জানলা দিয়ে অনেককে ডেকেও সাড়া পায়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমার ধারণা, নামার সময়ে মেয়েটি হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমি চেঁচামেচি করায় স্কুলগাড়ির চালক ও সহকারী এসে বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুল স্বীকার করে নেন। মেয়েটিকে তাঁরা স্কুলে পৌঁছে দেবেন বলেও জানান। এর পরে আমি নিজে স্কুলে গিয়ে ঘটনাটি জানাই। তবে দুশ্চিন্তা না করতেই বলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।’’
নিউ টাউন স্কুলের এক কর্তা সুনীল আগরওয়াল বলেন, ‘‘স্কুলের নিজস্ব বাসে এমন ঘটেনি। বাইরের অনেক স্কুলগাড়ি পড়ুয়াদের নিয়ে যাতায়াত করে। তেমন কোনও গাড়িতে কিছু ঘটেছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। এ নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি।’’
নিউ টাউনে যাঁরা স্কুলগাড়ি চালান, তাঁদের সংগঠন অবশ্য ঘটনাটির কথা জানে। সংগঠনের তরফে মানস সাহা বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘‘ওই গাড়ির চালক জানিয়েছেন, বাচ্চাটি ঘুমিয়ে পড়েছিল। ওকে ওঁরা দেখতে পাননি। কেন এমন অবহেলার ঘটনা ঘটল, তা জানতে ওই চালক ও সহকারীর সঙ্গে কথা বলা হবে।’’