অমরনাথ জায়সবাল। নিজস্ব চিত্র
মৃতের পরিবারের লোকেরা বলছেন, তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই। ‘‘ডাক্তারবাবু যথাসাধ্য করছেন।’’ তা হলে ডাক্তারবাবুর মাথা ফাটাল কে? মৃতের বাবার দাবি, ‘‘ওঁরা আমার পরিবারের কেউ নন।’’ রোগীমৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর ও ডাক্তারকে মারধরের ঘটনায় বহিরাগতদের যুক্ত থাকার প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে শুক্রবারের ঘটনাতেও।
এ দিন ফুলবাগানের একটি নার্সিংহোমে মধ্য কলকাতার বাসিন্দা অমরনাথ জায়সবাল (৪৫) নামে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি থাকা অমরনাথবাবুর মৃত্যু হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে। গাফিলতির অভিযোগ তুলে শুক্রবার সকাল থেকে তাঁর পরিজনেরা গোলমাল শুরু করেন বলে অভিযোগ। বেলা গড়াতে শুরু হয় ভাঙচুর। প্রবীণ চিকিৎসক জগদীশপ্রসাদ অগ্রবালের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যাঁরা এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ‘সক্রিয়’ ছিলেন বলে কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাঁরা কেউই তাঁদের আত্মীয় নন বলে জানান মৃতের বাবা বিজয়কুমার জায়সবাল। মাস কয়েক আগে একবালপুরের এক হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনাতেও সামনে এসেছিল এই তথ্য। সেখানে স্থানীয় দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালিয়েছিল।
এ দিনের ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ করেনি মৃতের পরিবার। বিজয়বাবুর কথায়, ‘‘ছেলেকে তো ফিরে পাব না। নার্সিংহোম ভাঙচুর করে কী হবে? ওই চিকিৎসকের সঙ্গে দীর্ঘ পরিচয় আমাদের।’’ তা হলে এই ঘটনার সঙ্গে কে যুক্ত? তাঁর জবাব, ‘‘বুঝতে পারছি না। হয়তো ছেলের বন্ধুরা।’’ পুলিশের দাবি, ধৃতেরা সকলেই মৃতের আত্মীয়। তাঁদের নাম মনমোহন জায়সবাল, রাকেশ গুপ্ত, সুনীল জায়সবাল, মনোজ জায়সবাল।
চিকিৎসকের ছেলে গোপাল অগ্রবাল ঘটনার সময়ে হাসপাতালেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বাবা ও অন্য কয়েক জন চিকিৎসক নার্সিংহোমে একটি কাচের ঘরে ছিলেন। আচমকাই ১০-১২ জন ঢুকে আসেন। কাচের ঘরের বাইরে থেকেই বাবার দিকে ইট ছোড়া হয়। মাথায় লাগে ইট। বাবা চেয়ার থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান।’’ বাইপাসের একটি হাসপাতালে তাঁর কপালে সাতটি সেলাই পড়ে।
নার্সিংহোম মালিকদের একাংশের বক্তব্য, সম্প্রতি পাশ হওয়া স্বাস্থ্য বিলের অপব্যাখ্যার জেরে রাজ্য জুড়ে নার্সিংহোম, বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের উপরে হামলা চলছে। যে কোনও ঘটনাতেই নার্সিংহোম ও চিকিৎসককে অপরাধী মনে করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ডেকে হেনস্থারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক মহলেরও অভিযোগ, এমন ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশের তদন্তের গতি শ্লথ হয়। ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ অভিযুক্তেরা পার পেয়ে যান। ফলে এমন ঘটনা বারবার ঘটতেই থাকে।
এ দিনের ঘটনার নিন্দা করেছে চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের রাজ্য শাখার সম্পাদক চিকিৎসক শান্তনু সেন বলেন, ‘‘পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা রাখছি, সরকার এ সব বরদাস্ত করবে না।’’ চিকিৎসকদের আর একটি সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের তরফে সভাপতি চিকিৎসক রেজাউল করিম বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা বারবার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এক জন বৃদ্ধ চিকিৎসক, যিনি পঞ্চাশ বছরের উপরে এই পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত, তাঁকে এমন আক্রমণের তীব্র সমালোচনা করছি।’’ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ‘ডক্টর্স ফর পেশেন্ট’ ও ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’ আজ, শনিবার মিছিলের ডাক দিয়েছে।