মর্মান্তিক: অশোক হাজরার (ইনসেটে) মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে উত্তেজিত পরিজনেরা। রবিবার, লেক টাউনে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
লোহার ফলায় আটকে রয়েছে রোগীর দেহ। কোমরের নীচে পিছনের দিক থেকে লোহার ফলা এ ফোঁড়-ও ফোঁড় করে বেরিয়েছে। বছর পঁয়ষট্টির রোগী অশোক হাজরার দেহ তার উপরে পড়ে, চিৎ অবস্থায় ঝুলছে। একটি পা বেঁকে মুখের কাছে চলে এসেছে। বেসরকারি হাসপাতালের আশপাশের দেওয়ালে ছিটকে লেগেছে রক্তের দাগ। রবিবার দুপুরে সেই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠলেন লেক টাউনের বাসিন্দারা। পুলিশের অনুমান, হাসপাতালের শৌচাগার থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বৃদ্ধ। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে কী ভাবে পাঁচতলায় আইসিইউ-এর শৌচালয় থেকে পড়ে গেলেন বৃদ্ধ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মৃতের পরিবার।
হুগলির জাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা অশোকবাবুর ছেলে অমিত হাজরা এ দিন জানান, কিছু দিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তাঁর বাবা। বুধবার মানিকতলার ইএসআই হাসপাতাল থেকে অশোকবাবুকে লেক টাউন ঘড়ি মোড়ের কাছে ওই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সিওপিডি-র রোগী অশোকবাবু আইসিইউ-এর ১৩ নম্বর বেডে ছিলেন। এই ক’দিনে তাঁর বাবা বেশ সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন বলে জানিয়েছেন অমিত। তিনি বলেন, ‘‘আজ সকাল ১০টার সময়ে বাবার সঙ্গে দেখা করেছি। ভাল ভাবেই কথা বললেন। কোনও সমস্যা চোখে পড়েনি। ১১টা নাগাদ মায়ের আসার কথা ছিল। ঘড়ির মোড় থেকে মাকে নিয়ে ফেরার পরে হাসপাতাল থেকে বলল, বাবা শৌচালয় থেকে পড়ে গিয়েছেন। আমরা যেন আর জি করে যাই।’’
ঘটনাটি কী ভাবে ঘটল, সে বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সিইও দীপঙ্কর শতপথী বলেন, ‘‘আমাদের চিকিৎসায় রোগী অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠছিলেন।’’ এ দিন সকালেই আরএমও অশোকবাবুকে মনোরোগ চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সিইও। যদিও তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রোগীর বাড়ির লোকেরা। তাঁদের বক্তব্য, দুপুরে ঘটনাটি ঘটল আর সকালেই মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা লিখলেন আরএমও! এমন কী ভাবে হল, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এ দিন সকাল ৯টা থেকে রোগী প্রচণ্ড উত্তেজিত ছিলেন। বাড়ি যাওয়ার জন্য জেদ করে ওষুধ-খাবার খেতে চাইছিলেন না। সে জন্য সকাল ১০টা নাগাদ পরিবারের সদস্যদের ডাকা হয়। ছেলে-বৌমা চলে গেলে পৌনে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার অসিতবরণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘১৫ নম্বর বেডে এক রোগীর ইসিজি হচ্ছিল। তিন নম্বর শয্যার রোগীর অবস্থার অবনতি হয়েছিল। সেই সময়ে ১৩ নম্বর বেডের রোগী চিকিৎসকদের শৌচাগারে চলে যান। জানলার কাচ ভাঙার শব্দ পেয়ে এক নার্স দেখেন, বৃদ্ধের দেহ বীভৎস অবস্থায় লোহার ফলায় আটকে রয়েছে।’’ বৃদ্ধের বেড থেকে শৌচালয়ের দূরত্ব বেশি নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
মৃতার স্ত্রী ডলি হাজরা বলেন, ‘‘ওর তো ক্যাথিটার লাগানো ছিল। তা সত্ত্বেও শৌচালয়ে কেন যাচ্ছে, সেটা কারও নজরে পড়ল না? হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় রোগীর নিরাপত্তার দায়িত্ব কার?’’ পুলিশ জানিয়েছে, দেহের ময়না-তদন্ত করানো হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।