মুখ ঘুরিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্ক, মৃত্যু রোগীর

রক্ত লাগবে ছয় ইউনিট। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক তিন ইউনিট রক্ত দিয়েছে। বাকি রক্তের জোগান হবে কী ভাবে? সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা। শুধু বলেন, ‘সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে চলে যান।’ কিন্তু অন্য কোথাও রক্ত জোগার করতে হলে রিকুইজিশন স্লিপে ‘রক্ত নেই’ লিখে দিতে হবে।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ০২:২০
Share:

রক্ত লাগবে ছয় ইউনিট। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক তিন ইউনিট রক্ত দিয়েছে। বাকি রক্তের জোগান হবে কী ভাবে? সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা। শুধু বলেন, ‘সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে চলে যান।’

Advertisement

কিন্তু অন্য কোথাও রক্ত জোগার করতে হলে রিকুইজিশন স্লিপে ‘রক্ত নেই’ লিখে দিতে হবে। রোগীর পরিবার ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের সেই অনুরোধ করলেও, তাঁরা কানে তোলেননি। গভীর রাত থেকে পরের দিন সকাল, বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত জোগার করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় রোগীর পরিবার। সব জায়গায় জানানো হয়, রিকুইজিশন স্লিপে ‘রক্ত নেই’ লেখা না থাকলে রক্ত মিলবে না। আর এই টানাপড়েনেই মারা যান রোগী।

ঘটনাটি ঘটেছে এনআরএস হাসপাতালে। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন এক রোগীর পরিবার। উত্তর চব্বিশ পরগনার চাঁদপাড়ার বাসিন্দা সুশান্ত রায় হাসপাতালের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এনআরএসের ঘটনাটি নতুন নয়। একাধিক সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে দুর্ভোগ নিত্যদিনের। জরুরি অবস্থাতেও দ্রুত রক্ত পাওয়া যায় না। বিকেল পাঁচটার পরে নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত না থাকলে দাতা নিয়ে এলেও রক্ত দিতে পারে না, এমনকী অন্য ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত আনার জন্য রিকুইজিশন স্লিপ লিখে দিতেও গড়িমসি করেন ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা। সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলছেন রোগীর পরিবারের সদস্যের একাংশ।

এনআরএস হাসপাতালে সুশান্তবাবুর অভিযোগ সেই তালিকায় আর একটি সংযোজন। সুশান্তবাবুর অভিযোগ, দিন কয়েক আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর মেয়ে। নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ওই তরুণী। তাঁকে ৩০ এপ্রিল ভর্তি করেন এনআরএসে। মৃতার পরিবারের দাবি, তার পরেই ব্লাড ব্যাঙ্কের অসহযোগিতার জেরে দুর্ভোগের শিকার হন তাঁরা। ২ মে সকালে বছর কুড়ির সৌরভী রায়ের মৃত্যু হয়।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, লিউকেমিয়া রোগীর রক্তপাত শুরু হলে বাঁচানোর সম্ভাবনা কম থাকে। তাই মেয়েটির মৃত্যুর কারণ পর্যাপ্ত রক্ত না পাওয়া কি না, সেটা তদন্ত করে দেখতে হবে। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্ক তো প্রয়োজনীয় রক্ত দেবে। আর রক্ত না থাকলে রিকুইজিশন স্লিপে লিখে দিতে হবে, এটাই নিয়ম। তা যদি না লেখা হয়, সেটা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা দরকার। হেমাটোলজিস্ট গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর যদি রক্তক্ষরণ শুরু হয়, তা হলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হতে পারে। তবে যতটা রক্ত দেওয়া দরকার, ব্লাড ব্যাঙ্ক সেটা দেবে। না থাকলে অবশ্যই রিকুইজিশন স্লিপে লিখতে হবে।’’

এনআরএস হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর দীলিপ পাণ্ডা বলেন, ‘‘কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গিয়েছে। রিকুইজিশন স্লিপে ব্লাড দেওয়ার পরে রক্ত নেই, সেটা লেখা যায় না। নতুন স্লিপে লিখতে হয়। হয়তো সেটা বুঝতে ভুল হয়েছে।’’ হাসপাতালের সুপার হাসি দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’’

তবে নিছক ভুল বোঝার জেরেই কি প্রাণ চলে গেল এক জনের? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement