—ফাইল চিত্র।
শিয়ালদহে রেলবিভ্রাটের কবলে পড়লেন ‘প্রিমিয়াম ক্লাস’ ট্রেন রাজধানী এক্সপ্রেসের যাত্রীরাও। শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ শিয়ালদহে পৌঁছনোর কথা ছিল যে ট্রেনের, সেই ট্রেন দুপুর দেড়টার সময় ঢুকল শিয়ালদহ স্টেশনে। তার আগে ঠায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইল দমদম স্টেশনের বাইরের অংশে। অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হারিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়লেন যাত্রীরা। রাজধানী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের এই দুর্ভোগ দেখে হতবাক অনেকেই।
যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে, এই যুক্তিতেই ‘কর্মযজ্ঞ’ চলছে শিয়ালদহ স্টেশনে। শিয়ালদহের ১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের কাজ চলছে। তার জেরে বদল আনা হয়েছে রেল পরিষেবায়। বাতিল হয়েছে বহু ট্রেন। বিপর্যস্ত দূরপাল্লার রেল পরিষেবাও। সেই দুর্ভোগের শিকার হয় রাজধানীও।
দিল্লি-শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেসের শিয়লদহে পৌঁছনোর কথা ছিল সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে। সেই মতো ঠিক সময়েই দমদমে এসে পৌঁছয় ট্রেনটি। সকাল ৯টা ২৫মিনিটে ট্রেন দমদম স্টেশেনর বাইরে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও ট্রেন চলার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। ট্রেন কখন ছাড়বে বুঝতে না পেরে শেষ পর্যন্ত রেললাইনেই নেমে পড়েন যাত্রীরা। ভারী ব্যাগ-স্যুটকেস কেউ কাঁধে, কেউ পিঠে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেন লাইন ধরে! শেষে দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে ছাড়ে ট্রেন। তবে তত ক্ষণে বহু যাত্রী ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
দমদমের ইয়ার্ডে যেখানে শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঠাঠা গরমে তিন ঘণ্টা দাঁড়য়েছিল রাজধানী, সেখানে মূলত মালগাড়ি দাঁড়ায়। ওই এলাকায় নীচে এবড়োখেবড়ো জমি। ছড়ানো-ছিটনো থাকে পাথরও। দমদম প্ল্যাটফর্মও ওই এলাকা থেকে অনেকটা দূরে। কিন্তু সে সবের পরোয়া না করেই এই গরমে সেখানে নেমে পড়েন অনেকে। বাড়ি ফিরবেন বলে। শেষে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে বাকি যাত্রীদের নিয়ে ট্রেন পৌঁছয় শিয়ালদহ স্টেশনে।
দেশের অন্যতম প্রথম শ্রেণির ট্রেনে, যেখানে যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্যের নিশ্চয়তা পেতে টিকিট কাটেন ট্রেনযাত্রীরা, সেই ট্রেনের যাত্রীদের এই দুরবস্থায় হতবাক সকলেই। অব্যবস্থার জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। সমালোচনা করেছেন খোদ রেলেরই প্রাক্তন কর্তা।
যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্য যেখানে লক্ষ্য, সেখানে যাত্রী পরিষেবা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কী ভাবে আপস করছে রেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রেলের ওই প্রাক্তন কর্তা বলেন, ‘‘শিয়ালদহে যে কাজ হচ্ছে তা পূর্বপরিকল্পিত। এই কাজের জন্য যে যাত্রীভোগান্তি হবে, তা জানা কথা। কিন্তু রাজধানীর মতো প্রেস্টিজিয়াস ট্রেনকে কেন এমন করা হল, বুঝতে পারলাম না। প্রয়োজনে তো আজকের জন্য ট্রেনটাকে হাওড়া ঢোকানো যেত!”
প্রসঙ্গত, শনিবার সকাল থেকে রেল এই কাজ নিয়ে কোনও রকমের কোনও আপডেট দেয়নি কোথাও। পূর্ব রেলের সমাজমাধ্যমের যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেখানেও কোনও তথ্য পোস্ট করা হয়নি। ফেসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপ এবং এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে কোনও তথ্য জানানো হয়নি। ঘোষণা করা হয়নি প্ল্যাটফর্মেও। শনিবার রাজধানীর যাত্রীদের দুর্ভোগের খবর পেয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিকের সঙ্গে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। জবাব দেননি হোয়াট্সঅ্যাপের বার্তারও।
শিয়ালদহে রেল বিভ্রাটের প্রভাব পড়েছে লোকাল ট্রেন পরিষেবাতেও। অনেক ট্রেন যাত্রা শুরু ও শেষ করছে দমদম জংশন, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, বারাসত এবং কল্যাণী স্টেশনে। এর জেরে যাত্রীদুর্ভোগের অন্ত নেই। শুক্রবার সকাল থেকেই শিয়ালদহ মেন এবং উত্তর শাখায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় সকাল থেকে রাত অবধি স্টেশনগুলিতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছিল। শুক্রবার সকালে টিটাগড় এবং খড়দহ স্টেশনের মাঝে ভিড়ের চাপে এক তরুণ ট্রেন থেকে পড়ে যান। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।