অভিবাসন সংক্রান্ত নতুন আইনের পথে কেন্দ্র। —ফাইল চিত্র।
ভারতে অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে কড়া আইন আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। চলতি অধিবেশনে একটি নয়া অভিবাসন বিল (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স বিল, ২০২৫) লোকসভায় পেশ করেছে কেন্দ্র। বিলটি আইনে পরিণত হলে অবৈধ অভিবাসনের দায়ে সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। সঙ্গে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানাও হতে পারে। ভুয়ো পাসপোর্ট বা ভিসায় ভারতে প্রবেশ, থাকা বা দেশ ছাড়ার সময়ে ধরা পড়লে এই শাস্তি হতে পারে বিদেশি নাগরিকদের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তৈরি করা এই বিলে নজরদারি আরও বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপের কথাও বলা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুসারে, বিভিন্ন হোটেল, বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমকে বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে বাধ্যতামূলক ভাবে তথ্য জানাতে হবে প্রশাসনকে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ভিসায় কেউ ভারতে বাস করছেন কি না, তার উপর নজর রাখার জন্য এই পদক্ষেপ।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উড়ান সংস্থা এবং জাহাজকেও যাত্রী এবং বিমান বা জাহাজকর্মীর তালিকা আগে থেকে জমা দিতে হয় প্রশাসনকে। গত ১১ মার্চ লোকসভায় বিলটি পেশ করে কেন্দ্র। সংবাদ সংস্থা ওই বিলে বলা হয়েছে, “কেউ সজ্ঞানে ভারতে প্রবেশ, থাকা বা ভারত ছাড়ার জন্য ভুয়ো পাসপোর্ট, ভিসা বা অন্যান্য ভ্রমণ সংক্রান্ত নথি ব্যবহার করলে বা সরবরাহ করলে, অন্তত দুই বছরের কারাদণ্ড হবে। সেটি সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে। একই সঙ্গে অন্তত এক লক্ষ টাকা জরিমানা হবে, যা সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।” পাশাপাশি এই বিলের মাধ্যমে ভারতের ‘যে সব জায়গায় বিদেশিরা ঘন ঘন আসেন’, সেই জায়গাগুলিতে নিয়ন্ত্রণেরও ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনকে। ওই জায়গাগুলির উপর নিয়ন্ত্রণের জন্য মালিকপক্ষকে সেটি বন্ধ করতে বলার, শর্তসাপেক্ষে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার বা ‘নির্দিষ্ট একটি শ্রেণির’ বিদেশিদের সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা থাকবে প্রশাসনের হাতে।
বর্তমানে অভিবাসন এবং বিদেশি নাগরিক সংক্রান্ত বিষয়গুলির মূলত চারটি আইন রয়েছে— পাসপোর্ট আইন (১৯২০), বিদেশি নাগরিক নিবন্ধন আইন (১৯৩৯), বিদেশি নাগরিক আইন (১৯৪৬) এবং অভিবাসন আইন (২০০০)। এই চারটি পৃথক আইনের বদলে এ বার একটিই আইন চালু করতে চাইছে কেন্দ্র। সেই লক্ষ্যেই নয়া অভিবাসন বিল পেশ করা হয়েছে। বর্তমানের চারটি আইনের অনেকগুলি ধারাই নয়া অভিবাসন বিলেও রাখা হয়েছে। পিটিআই জানিয়েছে, চারটি আইনকে আরও সরল করতে এবং প্রতিটির মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখতেই চারটির বদলে একটি আইন আনার পক্ষে কেন্দ্র। পাশাপাশি, বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে বেশ কিছু নতুন ধারাও যুক্ত করা হয়েছে নয়া অভিবাসন বিলে। দেশে অর্থনীতির ও পর্যটনের বিকাশের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার সুষ্ঠু ভারসাম্য রাখার চেষ্টা রয়েছে এই বিলে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে ৯৮ লক্ষ ৪০ হাজার বিদেশি নাগরিক ভারতে এসেছেন। কেন্দ্রের এক আধিকারিক পিটিআইকে জানিয়েছেন, ভারতে অবৈধ অভিবাসন সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলা করতে এই বিলটি সাহায্য করবে। একই সঙ্গে বিদেশি নাগরিকেরা ভারতের কোথায় কোথায় যাচ্ছেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ ভিসায় কেউ রয়েছেন কি না, তা-ও খুঁজতে সাহায্য করবে এটি। বস্তুত, ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে বিদেশিদের যাওয়ার জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। তালিকায় রয়েছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, উত্তরপূর্বের কিছু রাজ্য, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান এবং জম্মু ও কাশ্মীরের কিছু অঞ্চল।