দাবি: সন্তানের নিরাপত্তা চেয়ে মা। শনিবার। ছবি: সুরবেক বিশ্বাস
রানিকুঠির কাছে যে তল্লাটে জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন, তার আশপাশে আছে বেশ কিছু সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলও। বেসরকারি স্কুলে পড়ার খরচ, পড়ার মান, আনুষঙ্গিক ঠাটবাট ও চটকের নিরিখে ওই সব স্কুলকে এমনিতে ধর্তব্যের মধ্যেই গণ্য করা হয় না।
কিন্তু চার বছরের এক ছাত্রীকে স্কুলের মধ্যে যৌন নিপীড়ন ও তাতে দুই শিক্ষকের গ্রেফতারের ঘটনার পরে জি ডি বিড়লা স্কুলের এক ছাত্রীর মায়ের কথায়, ‘‘এর চেয়ে সরকারি স্কুলে ভর্তি করালে পড়াশোনা, ঠাটবাট হয়তো কম হত, কিন্তু কখন মেয়ের সর্বনাশ হয়ে যাবে, সেই দুশ্চিন্তা থাকত না।’’ আর এক মা বললেন, ‘‘যা হল, এর পরে তো মেয়েকে স্কুলে পাঠাতেই ভয় করছে।’’
দুশ্চিন্তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বাড়ছে ক্ষোভ। এতটাই যে, প্রিন্সিপ্যাল শর্মিলা নাথ স্কুলে ছাত্রীদের সুরক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা আগামী দু’টি কাজের দিনের মধ্যে করা হবে বলে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিলেও তাঁর গ্রেফতারির দাবিতে এখনও অনড় অভিভাবকদের একাংশ। প্রিন্সিপ্যালকে তাঁরা আইনি নোটিস পাঠানোরও তোড়জোড় করছেন। বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনার জেরে শেষমেশ এ দিন স্কুলে একাধিক ক্লোজ্ড সার্কিট টিভি ক্যামেরা বসেছে।
মধ্য শিক্ষা পর্ষদের যে দল ওই স্কুলে পরিদর্শনে গিয়েছিল এ দিন তারা স্কুল শিক্ষা দফতরকে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছে, সেখানে সুরক্ষার পরিকাঠামো অপ্রতুল। আয়ার সংখ্যাও কম। সেই সঙ্গে প্রিন্সিপ্যালের কথাতেও মিলেছে অসঙ্গতি।
তড়িঘড়ি: শনিবার সকালেই স্কুলের গেটে বসেছে সিসিটিভি। নিজস্ব চিত্র
শনিবার ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও বহু অভিভাবক স্কুলের সামনে ভিড় করেন। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই তল্লাটে একটি মিছিল করেন অভিভাবকেরা। পুরনো স্কুলবাড়ি ও উল্টো দিকে নতুন স্কুলবাড়ির বন্ধ ফটক ও আশপাশের দেওয়ালে পোস্টার দেন পড়ুয়াদের বাবা-মায়েরা। আজ, রবিবার সকাল ৯টায় স্কুলের সামনে অভিভাবকেরা একটি সভা ডেকেছেন। সেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ ও ফোরাম তৈরির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মিছিলে ও পোস্টারে ক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি সভার কথাও বলা হয়। তবে সভায় বহিরাগতদের ঠেকাতে পড়ুয়াদের পরিচয়পত্র আনতে বলা হয়েছে। অভিভাবকেরা ইতিমধ্যেই একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করেছেন।
অভিভাবকদের একাংশ জানান, সভা থেকে মিছিল করে যাদবপুর থানায় যাবেন অধ্যক্ষাকে গ্রেফতারের দাবিতে। পুলিশের একাংশ অবশ্য বলছে, এই দাবি অযৌক্তিক।
এ দিন কলকাতায় কেন্দ্রীয় স্কুল শিক্ষা সচিব অনিল স্বরূপ বলেন, ‘‘জি ডি বিড়লায় যা ঘটেছে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের আছে। স্কুলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতেও পারে সরকার।’’
অধ্যক্ষা লিখিত ভাবে অভিভাবকদের জানান, ফোরাম গঠনের ব্যাপারে তাঁদের ১৫ জনের সঙ্গে তিনি আগামী ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় আলোচনায় বসবেন। অভিভাবকদের অধিকাংশই এ সবে নরম হচ্ছেন না। ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা দেবদত্ত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘তিন বছর আগে এমনই একটি ঘটনা স্কুল কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দিয়েছিলেন। এ বার শেষ দেখে ছাড়ব।’’ একই কথা সঞ্জয় ভট্টাচার্যের, যাঁর কন্যা তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। দ্বিতীয় শ্রেণির এক পড়ুয়ার মা, পায়েল দত্ত চার্ট পেপারে স্কেচ পেনে লেখা পোস্টার সাঁটছিলেন স্কুলের বন্ধ ফটকে। পোস্টারগুলির কোনওটায় লেখা, ‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ। শিশুরা ভোগ্যপণ্য নয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের শাস্তি চাই’, কোনওটায় আবার বলা হচ্ছে ‘স্কুল— প্লেস অব ওয়াইল্ড অ্যানিম্যালস, লেট আস মেক ইট সোবার।’
এ দিন অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের ফোরামের সদস্যেরা জি ডি বিড়লার অভিভাবকদের সহমর্মিতা জ্ঞাপন করতে আসেন। বিকেল পাঁচটা নাগাদ একদল বহিরাগত সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙতে গেলে উত্তেজনা তৈরি হয়। তাঁদের বক্তব্য, স্কুলের বাইরে কেন ক্যামেরা বসেছে? তবে অভিভাবকদের একাংশ তাঁদের নিরস্ত করেন।