গোলমাল, আতঙ্ক কিছু দিন বন্ধ ছিল। যাত্রীরা যখন সবে ভাবতে শুরু করেছেন মেট্রো পরিষেবার হয়তো কিছুটা উন্নতি হয়েছে, ঠিক তখনই আবার বিপত্তি।
বৃহস্পতিবার মেট্রোর একটি কামরার সিলিং ফ্যান থেকে আগুন ঝরতে থাকায় ফের আতঙ্ক তৈরি হয় যাত্রী-ঠাসা কামরায়। ফলে ফের চিৎকার, চেঁচামেচি, হইচই। অফিস-ফেরতা যাত্রীরা ময়দান-সহ বেশ কয়েকটি স্টেশনে আটকে থাকেন বহুক্ষণ। যাত্রীদের বক্তব্য, এ দিনের ঘটনা আবারও বুঝিয়ে দিল, সেই ট্র্যাডিশন চলছেই।
মেট্রো সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ কবি সুভাষমুখী একটি ট্রেন ময়দান স্টেশনে ঢুকছিল। তখনই যাত্রীভর্তি একটি কামরার সিলিং ফ্যান থেকে আগুন ঝরতে শুরু করে। আতঙ্কে চিৎকার জুড়ে দেন যাত্রীরা। অনেকে ওই কামরা থেকে প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়েন। খবর যায় মেট্রো কর্মীদের কাছে। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র এনে আগুন নেভানো হয়। বন্ধ করে দেওয়া ফ্যান। এর পরে খালি করে দেওয়া হয় মেট্রোটি।
কিন্তু খালি রেকটি ওই স্টেশনে প্রায় ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকায় পিছনের মেট্রোগুলিও বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে। ফলে নাকাল হন অফিস-ফেরতা ঘরমুখো যাত্রীরা। পৌনে ৬টা নাগাদ ময়দান স্টেশন থেকে ওই ফাঁকা রেকটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরেও বহুক্ষণ লেগেছে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে।
গত পাঁচ-ছ’বছর ধরেই খুঁড়িয়ে চলা শুরু করেছে মেট্রো। এর প্রধান কারণ হল, সাধারণ রেকগুলির প্রায় বেশির ভাগই পুরনো হয়ে যাওয়া আর বাতানুকূল রেকগুলিতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি থেকে যাওয়া। রেলমন্ত্রী থেকে শুরু করে রেল বোর্ডের সব কর্তাই এটা জানেন। কিন্তু গত পাঁচ-ছ’বছরে পরপর পাল্টেছে রেলমন্ত্রী। পাল্টায়নি শুধু কলকাতা মেট্রোর হালহকিকত।
মেট্রোর ইউনিয়ন থেকে কর্তা, সবারই এক অভিযোগ। পরপর এত ঘটনা ঘটার পরেও কলকাতা মেট্রোয় কোনও স্থায়ী জেনারেল ম্যানেজার নিযুক্ত হননি। ফলে যা হওয়ার, তা-ই হয়ে চলেছে। অথচ অন্যান্য রেল জোনের মতো মেট্রোকেও এখন আলাদা রেল জোন হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ফলে অঘটন ঘটলে কাউকে দায়ী করতে পারছেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষ। তদন্ত করেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি কলকাতায় মেট্রোযাত্রীদের ঘণ্টা দেড়েক সুড়ঙ্গে আটকে থাকার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। কিন্তু কোন কর্মীদের দোষে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটল, সেটা আজও স্পষ্ট করে বলতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। যেমন পরিষ্কার হয়নি, কেন কমে গেল মেট্রোর যাত্রী-সংখ্যা। মেট্রোর কর্তাদের একাংশই জানিয়েছেন, মেট্রো কতৃর্পক্ষ এ নিয়ে মোটেই ভাবিত নন। তাঁদের বক্তব্য, আয় কমেনি, বরং উল্টে বেড়েছে। কিন্তু তাঁরা নিজেরাও জানেন, আয় বেড়েছে টিকিটের দাম বাড়ার জন্য। মেট্রোর পরিষেবা ভাল বলে নয়। সম্প্রতি লাগাতার গোলমালের পরে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিল রেল বোর্ড। কিন্তু কী ঘটছে, তা শুধু জানতে চেয়েই দায় সেরেছেন তাঁরাও।