তিনটি পোষ্যকে সন্তানস্নেহে মানুষ করেছিলেন লিওন ভ্যান বিলজন। সেই প্রিয় পোষ্যেরাই কাল হয়ে নেমে এসেছিল বছর ৭০-এর লিওনের জীবনে। যিনি ‘লায়ন ম্যান’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
২০১৯ সালের অগস্ট মাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ার উত্তরে অবস্থিত হ্যামানসক্রালের বাসিন্দা লিওনের মৃত্যু হয় তিন পোষ্য সিংহের আক্রমণে। যাদের তিনি ছোট থেকে কোলেপিঠে করে বড় করে তুলেছিলেন।
ঠিক কী হয়েছিল পাঁচ বছর আগে? লিওনের ‘মহলা ভিউ লায়ন গেম লজে’ ঘটেছিল এই মারাত্মক ঘটনাটি। সিংহের থাকার জায়গার বেড়াটি আরও সুরক্ষিত করার জন্য মেরামত করছিলেন তিনি।
পোষ্যদের থেকে কোনও বিপদ আসতে পারে তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি লিওন। সাবধানতা ছাড়াই তিনি পিছন ফিরে কাজ করছিলেন।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটি সিংহ এসে পিছন থেকে তাঁকে আক্রমণ করে ঘাড় কামড়ে দেয়। একে একে বাকি সিংহগুলি আক্রমণ করে বসে পালকপিতাকে। বাধা দেওয়ার কোনও সুযোগই পাননি লিওন।
আঁচড়ে-কামড়ে ছিন্নভিন্ন করে রক্তাক্ত পালকপিতাকে ঘিরে বসেছিল তিনটি পশু। তাই দ্রুত চিকিৎসার সুযোগও মেলেনি। সিংহগুলিকে সেখান থেকে সরানো যায়নি বহু ক্ষণ।
উপায়ন্তর না দেখে সব ক’টি সিংহকে গুলি করে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার পর লিওনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন চিকিৎসকেরা।
একটি নয়, তিনটি সিংহশাবক একসঙ্গে কিনে এনেছিলেন লিওন। দু’টি সিংহ ও একটি সিংহী। সন্তানের মতোই লালনপালন করতেন তিন পোষ্যকে। পুরুষ সিংহ দু’টির নাম র্যাম্বো ও নাকিতা। সিংহীটিকে আদর করে ডাকতেন ক্যাটরিন বলে।
বন্য পোষ্য তিনটির এত ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে, শাবক থাকাকালীন তিনি তাদের জন্য নির্দিষ্ট ঘেরাটোপের মধ্যেই ঘুমোতেন। লিওন বিশ্বাস করতেন সিংহদের সঙ্গে তাঁর বিশেষ বন্ধন ছিল।
লিওনের কন্যা লিওনেট ভ্যান উইক সংবাদমাধ্যমে বলেন, “সিংহের সেই খামারটি শূন্য থেকে তৈরি করেছি, সেখানেই বড় হয়েছি। আমার বাবা সিংহগুলিকে বড় করেছেন। তিনি তাদের সঙ্গে ঘুমোতেনও।’’
লিওন এবং তাঁর পরিবার ১৯৮৫ সালে মহলা ভিউ লায়ন লজে চলে আসেন। সেটি সেই সময়ে একটি খোলা জায়গা ছিল। ২০০৬ সালে তাঁর পরিবারের সদস্য হয়ে আসে তিনটি সিংহশাবক।
তিনি লজে বেড়াতে আসা ভ্রমণার্থীদের সিংহ সম্পর্কে নানা তথ্য দিতেন ও গাইড হিসাবে চারপাশ ঘুরিয়ে দেখাতেন। এ ছাড়াও তিনি শিক্ষার্থীদের সিংহ সম্পর্কিত নানা শিক্ষা দিতেন। সেই সংক্রান্ত ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
‘লায়ন ম্যান’-এর মৃত্যুর পাঁচ বছর পর সম্প্রতি ইউটিউবে লিওনের ভিডিয়োগুলি নতুন করে ছড়িয়ে পড়ার ফলে প্রচুর মানুষ তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ঘটনাটি নিয়ে পশু অধিকার কর্মীদের মধ্যে সমালোচনাও শুরু হয়েছে।
বন্যপ্রাণীদের যতই প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করা হোক না কেন তাদের পাশবিক প্রবৃত্তি হঠাৎ করেই জেগে উঠতে পারে। যার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে বলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংস্থার কর্মীরা।
অনেকেই মনে করছেন, লিওন একটি মারাত্মক ভুল করেছিলেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে বন্যপ্রাণীদের পোষ্য হিসাবে রাখা উচিত নয়। বন্য পশুর সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় সখ্য না করলে এই প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব ছিল বলে মনে করছেন তাঁরা।