প্রতীকী ছবি।
এখনও তীব্র আতঙ্ক ও অবসাদে ডুবে রয়েছেন পঞ্চসায়রে গণধর্ষণের অভিযোগকারিণী। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তাঁর অসংলগ্ন কথাবার্তাই তদন্তে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ফলে তদন্ত কিছুটা এগোলেও বেশ কিছু জায়গায় প্রশ্নচিহ্ন থেকে যাচ্ছে।
কেন অত রাতে মহিলা হোম থেকে একা বাইরে বেরোলেন, অভিযুক্তরা নির্যাতিতার পরিচিত কি না, মহিলা কি তালা খুলে নাকি তালা ভেঙে বাইরে বেরিয়েছিলেন— এমন অনেক প্রশ্নই ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান মুরলিধর শর্মা বলেন, ‘‘একটি গণধর্ষণের মামলা রুজু হয়েছে। তবে ঠিক কী ঘটেছিল, সে বিষয়ে তথ্য পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।’’
সোমবার গভীর রাতে পঞ্চসায়রের হোম থেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন এক মহিলা আবাসিক। এর পর তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে দুই যুবক গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। গণধর্ষণের পর ওই মহিলাকে বেধড়ক মারধরও করা হয় বলে তিনি তাঁর পরিবারের লোকজনকে জানিয়েছেন। ঘটনায় এখনও অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিষয়টি বেশ রহস্যে মোড়া। ঠিক কী হয়েছিল, সব দিক খতিয়ে দেখার পরেই সেটা বলা যাবে।’’
তদন্তে নেমে ওই মহিলার বয়ান নেওয়ার চেষ্টা করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, প্রচণ্ড আতঙ্কে থাকায় এখনও ওই মহিলা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। তাই তাঁর বয়ান বা ঘটনার বর্ণনা ঠিকমতো নিতে পারছেন না তদন্তকারীরা। কিন্তু পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। নির্যাতিতার পক্ষ থেকে পঞ্চসায়র থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগপত্রে জানানো হয়েছে, গাড়িতে করে নির্যাতিতাকে সোনারপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় মানুষদের সহায়তায় তিনি গড়িয়াহাটে পৌঁছন। সেখান থেকে যান এক মামার বাড়ি এবং তার পর বেহালায় বোনের বাড়ি। নির্যাতিতার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারছেন না কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন: জলকামান-কাঁদানে গ্যাস-লাঠি, বিজেপির পুরসভা অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার চাঁদনি চকে
যে সব প্রশ্ন ভাবাচ্ছে পুলিশকে
অত রাতে মহিলা হোম থেকে কেন বাইরে বেরোলেন এবং তা-ও আবার একা।
মহিলা কি তালা খুলে বেরিয়েছিলেন, নাকি তালা ভেঙে— জানতে তালার ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
যে দুই যুবক ছিল বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তারা কি ওই মহিলার পরিচিত? তাদের দেখেই কি ওই গাড়িতে উঠেছিলেন মহিলা, নাকি, অত রাতে নির্জন রাস্তায় এক মহিলাকে রাস্তায় দেখে জোর করেই তুলে নিয়েছিল অভিযুক্তরা।
ওই বৃদ্ধাবাসে আশেপাশে প্রচুর বাড়ি রয়েছে। জোর করে যদি তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তা হলে চিৎকার চেঁচামেচি হওয়ার কথা। কিন্তু পুলিশ এলাকার বাসিন্দাদের কাছে খবর নিয়ে জেনেছে, রাতে চিৎকার-চেঁচামেচির কিছুশুনতে পাননি তাঁরা।
বৃদ্ধাবাসে কেন কমবয়সী মহিলাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল? বৃদ্ধাবাসের অন্য আবাসিকদেরও বয়স অনেক কম। তাঁদেরও কেন আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়টিও নজরে রয়েছে গোয়েন্দাদের।
ওই বৃদ্ধাবাসটি আইন মেনে চলছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
হোম এবং স্থানীয় এলাকায় তদন্তে গিয়ে পুলিশ দেখেছে, নির্যাতিতা যে বৃদ্ধাবাসে থাকতেন, সেখানে সিসি ক্যামেরা ছিল না। উল্টো দিকের একটি বাড়িতে যে সিসি ক্যামেরা ছিল, ঘটনাচক্রে সেটি খারাপ ছিল। ফলে ফুটেজ উদ্ধার না হওয়ায় ওই রাতে ঠিক কি হয়েছিল, তা নিয়ে ধন্ধে গোয়েন্দারা। নির্যাতিতার তাঁর বোন থানায় জানিয়েছেন, দুই যুবক সাদা গাড়িতে করে সোনারপুর এলাকায় তুলে নিয়ে গিয়েছিল। ওই সময় নাগাদ আশপাশের রাস্তা বা কোনও বাড়ির সিসিটিভিতে সেই সাদা গাড়ির ছবি ধরা পড়েছে কি না, তার খোঁজ করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: যাদবপুরে পর পর দু’দিন একই ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করল শেখ বিনোদ, পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ
সব মিলিয়ে তদন্ত বেশ কিছুটা এগোলেও এখনও অনেক বিষয়েরই জট খুলতে পারেননি তদন্তকারীরা। তবে পুলিশের আশা, মহিলা কিছুটা সুস্থ হলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে ঘটনা সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই ঘটনার কিনারা হতে পারে বলেই মনে করছেন তদন্তকারী অফিসাররা।