ছবি সরকার।
ভোর সাড়ে ৪টে থেকে দুপুর প্রায় আড়াইটে পর্যন্ত শ্বাসকষ্টে খাবি খেতে থাকা এক প্রৌঢ়াকে ন্যূনতম অক্সিজেনটুকু না-দিয়ে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠল এসএসকেএম ও তার অ্যানেক্স পুলিশ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এর পরেই গত সোমবার মারা যান কিডনির রোগে আক্রান্ত, গড়িয়ার বোড়ালের বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়া। মৃতার নাম ছবি সরকার (৬২)। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় এসএসকেএম ও পুলিশ হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এনে মঙ্গলবার মৃতার দুই মেয়ে তনয়া মুন্সি ও তমসা সরকার ভবানীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
গুরুতর অসুস্থ রোগীকে যে কোনও উপায়ে দ্রুত ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করার কথা মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার বললেও তা বাস্তবে কতটা মানা হচ্ছে, এই ঘটনায় সেই প্রশ্ন উঠেছে। এসএসকেএমের নথিপত্র অনুযায়ী, ভোর সাড়ে ৪টেয় হাসপাতালে আসা ওই রোগিণীকে জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি করার প্রয়োজন রয়েছে বলে লেখা হয়েছে। অথচ এসএসকেএমের চিকিৎসকেরাই সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে লিখেছেন, শয্যার অভাবে ভর্তি নেওয়া যাচ্ছে না তাঁকে।
অভিযোগ, ৩০ অগস্ট ভোর থেকে হাসপাতাল চত্বরে ছুটোছুটি করে শেষে দুপুর ২টো নাগাদ অসুস্থ ছবিদেবীকে এসএসকেএমের অ্যানেক্স পুলিশ হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু তনয়া ও তমসার কথায়, ‘‘সেখানে পরিষেবা বলতে কিচ্ছু নেই। আইসিইউ দূর অস্ত্, মাকে অক্সিজেন দেওয়ার কথা বলায় নার্সেরা জানান, অক্সিজেন রুমের চাবিই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!’’
যে রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি করে ডায়ালিসিসের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে এসএসকেএমের জরুরি বিভাগে তাঁকে অক্সিজেনটুকুও না দিয়ে ফেলে রাখা হয় কী করে, সেই প্রশ্নও তুলছেন তমসা ও তনয়া। তাঁদের কথায়, ‘‘আসলে আমাদের কাছে কোনও সাংসদ-বিধায়কের সুপারিশ ছিল না। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর মতো অর্থবলও নেই। চোখের সামনে মা হাঁপাতে-হাঁপাতে থেমে গেল!’’
তনয়ার দাবি, ওই দিন ভোরে ছবিদেবীকে নিয়ে এসএসকেএমের জরুরি বিভাগে ঢোকার পর থেকে তাঁরা নেফ্রোলজি, ডায়ালিসিস রুম, মেডিসিন, জরুরি বিভাগ— এ ভাবেই দিনভর চরকি পাক খেয়েছেন। শেষে বেলা ১১টায় রোগীকে দেখে বহির্বিভাগের চিকিৎসক দ্রুত ভর্তি করার কথা লিখলেও তা হয়নি। ফলে প্রৌঢ়ার ডায়ালিসিসও হয়নি।
দুই বোনের আরও অভিযোগ, এর পরে তাঁরা মাকে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়ে দেখতে পান, সেখানে পরিষেবার পরিকাঠামোই প্রায় নেই। তমসার কথায়, ‘‘মাকে বাঁচাতে তখন বেসরকারি জায়গায় নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করি। শেষে ক্লাবের ছেলেরা অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে আসেন। কিন্তু যাওয়ার পথেই মা মারা যান।’’ পুলিশ হাসপাতালে কোনও পরিকাঠামো নেই জেনেও কেন এসএসকেএমের নেফ্রোলজির চিকিৎসকেরা রোগীকে ওখানে রেফার করলেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তনয়া। তবে নেফ্রোলজির এক প্রবীণ চিকিৎসকের যুক্তি, ‘‘ওখানে পরিষেবার কথা আমাদের জানার কথা নয়। আমাদের বলা হয়েছে পুলিশ হাসপাতালে রোগী রেফার করতে, তাই আমরা করেছি। এসএসকেএমে শয্যা না থাকলে কী করব?’’ তিনি আরও জানান, এসএসকেএমের নেফ্রোলজির ২৫ শয্যার একটি ইউনিট শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে চলত। ওই ভবন সংস্কারের জন্য সপ্তাহখানেক আগে সেখানে রোগী ভর্তি বন্ধ করা হয়েছে এবং সেখানকার গুরুতর অসুস্থ রোগীরা এসএসকেএমের নেফ্রোলজিতে ভর্তি হয়েছেন। ওই ইউনিটটি পুলিশ হাসপাতালে সরানো হচ্ছে, তবে সেই কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। আবার এসএসকেএমের নেফ্রোলজি বিভাগে মাত্র ৩৫টি শয্যা। ফলে ভর্তির সমস্যা লেগেই রয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে শয্যা না মিললেও কেন এই রোগীকে জরুরি বিভাগে রেখে অক্সিজেন দেওয়া হল না? এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘‘দিনে প্রায় সাড়ে আটশো রোগী এসএসকেএমের জরুরি বিভাগে আসেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৬০০ জনকে তৎক্ষণাৎ ভর্তি করা বা অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন থাকে। কিন্তু তা বলে সবাইকে ভর্তি করা বা পরিষেবা দেওয়া যায় না। হাসপাতালের ক্ষমতারও তো সীমা রয়েছে। তবে এই ঘটনায় কী হয়েছিল, আমরা খতিয়ে দেখছি।’’