অঙ্গদান আন্দোলনে এখনও অনেক পথ বাকি

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ দেশে বছরে ২৫ হাজার রোগীর লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। বাস্তবে সংখ্যাটা দেড় হাজারের বেশি নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০০:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

যা ভাবা হয়েছিল তা এখনও অধরা। এই পরিস্থিতিতে প্রত্যাশার হার ছুঁতে সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়নের পক্ষে সওয়াল উঠল অঙ্গদান নিয়ে সম্প্রতি আয়োজিত এক আলোচনাসভায়।

Advertisement

সল্টলেকের দত্তাবাদ সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালে আয়োজিত আলোচনায় ছিলেন চিকিৎসক এবং অঙ্গদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনের প্রতিনিধিরা। গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট মহেশ গোয়েন্কা জানান, হেপাটাইটিস এ থেকে অ্যাকিউট লিভার ফেলিয়োর হতে পারে। আবার হেপটাইটিস বি-র কারণে সিরোসিস অব লিভার এবং লিভার ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সিরোসিস প্রাথমিক স্তরে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে রোগ ছড়ালে অঙ্গ প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় থাকে না। চিকিৎসকদের মতে, সচেতনতার প্রসার ঘটলে এবং প্রাথমিক স্তরে রোগ নির্ণয় করা গেলে হেপাটাইটিস রোধ করা সম্ভব। তবে প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় নেই, এমন রোগীও কম নয়। রাজ্যে জনসংখ্যার চার শতাংশ হেপাটাইটিস বি-এ আক্রান্ত। হেপাটাইটিস সি-এর ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান ১-২ শতাংশ। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ দেশে বছরে ২৫ হাজার রোগীর লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। বাস্তবে সংখ্যাটা দেড় হাজারের বেশি নয়।

প্রতিস্থাপনের এই ঘাটতিই আলোচনাসভায় অঙ্গদানে সচেতনতা বৃদ্ধির সুর বেঁধে দেয়। চিকিৎসক মহেশের বক্তব্য, ‘‘গত ডিসেম্বরের পরে রাজ্যে প্রত্যাশা মতো সে ভাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হচ্ছে না।’’ উঠে আসে কুসংস্কারের বিষয়টি। চিকিৎসক চন্দ্রাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আজ অমাবস্যা, তাই অঙ্গদান করব না। এমন কথাও শুনেছি।’’ আরেক চিকিৎসক বলেন, ‘‘এ জীবনে অঙ্গদান করলে পরের জন্মে সেই অঙ্গ ছাড়া জন্মাতে হবে, এমন ভুল ধারণাও পোষণ করেন অনেকে।’’ একইসঙ্গে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের খরচ কে জোগাবে, তা নিয়ে টানাপড়েনও যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, সেটাও আলোচনাসভা স্বীকার করে নেয়। সঞ্চালক-চিকিৎসক ইন্দ্রজিৎ তিওয়ারি এ ক্ষেত্রে সম্প্রতি মিন্টো পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিস্থাপনের খরচ জোগানো নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গও টেনে আনেন।

Advertisement

মহেশের মতে, ‘‘অঙ্গদাতাকে ইনটেন্সিভ দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে।’’ উল্টো দিকে বেঙ্গল অর্গান ডোনেশনের সঙ্গে যুক্ত ক্যাপ্টেন ভি এম স্বামীর বক্তব্য, ‘‘প্রতিস্থাপনের খরচ গ্রহীতার পরিবারের দেওয়া উচিত!’’ তহবিল গড়ার ভাবনা প্রসঙ্গে আয়োজক হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট (অ্যাডমিন) জয় বসু বলেন, ‘‘প্রতিস্থাপনের খরচ আমরা বহন করি। এ জন্য তহবিল আছে।’’

যুক্তি-পাল্টা যুক্তির এই আবহে অঙ্গদান আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত চিকিৎসক সৌরভ কোলে বলেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা সত্যিই রয়েছে। অঙ্গদান আন্দোলনকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে অগস্টে সব সোসাইটির চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement