সোমবার ভোরে হঠাৎ আগুনের হলকা দেখা যাওয়ায় তা নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা। ছবি: শৌভিক দে
একের পর এক বিপর্যয় ঘটে যাবে কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা তার দায় নেবেন না! তা হলে সমস্ত দায় ও দায়িত্ব স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে বলে দাবি তুলল বিরোধীরা। বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ধারাবাহিক ব্যর্থতার প্রতিবাদে পথে নামারও সিদ্ধান্ত নিল তারা।
বাগড়ি মার্কেটে ভয়াবহ আগুনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি তুলেছে সব বিরোধী দলই। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে মন্ত্রিগোষ্ঠী জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় ভুগে পরিস্থিতি মোকাবিলা আরও কঠিন করে তুলেছে বলেও বিরোধী নেতাদের অভিযোগ। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মন্ত্রিগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান, পুরমন্ত্রী, দমকলমন্ত্রী— একের পর এক মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সকলেই কী রকম যেন অসহায়! এটা কি একটা সরকার চলছে?’’
দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ঘিঞ্জি এলাকায় দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর যথাসাধ্য চেষ্টা করছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার।
কয়েক দিন আগেই ভেঙে পড়েছিল মাঝেরহাট সেতু। তার জের কাটতে না কাটতেই বাগড়ির আগুন। বিরোধী বাম ও কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, সেতুভঙ্গের জন্য পূর্তমন্ত্রী দায় নেননি। অগ্নিকাণ্ডের জন্য মেয়র, পুরমন্ত্রী বা দমকলমন্ত্রী কেউ দায় নিতে প্রস্তুত নন। তা হলে সব দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসিয়ে রেখেছেন। তাঁরা বিপর্যয় এড়ানো বা মোকাবিলায় কিছুই করতে পারছেন না। রাজ্যবাসীকেই বারবার বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’’এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসুর অভিযোগ, ‘‘বাজার যখন জ্বলছে, মন্ত্রীরা তখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন!’’
আরও পড়ুন: ৯০ কোটির ওষুধ গিলেছে আগুন, সঙ্কট জেলায়
বিপর্যয় মোকাবিলা থেকে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ— সরকারের সার্বিক ব্যথর্তার প্রতিবাদে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর বিধান ভবন থেকে মিছিল করে ধর্মতলায় জনসভার ডাক দিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। দলের প্রদেশ, জেলা ও বিধায়কেরা ওই কর্মসূচিতে থাকবেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী শিল্পের খোঁজে জার্মানি ও ইটালি গিয়েছেন। অথচ রাজ্যে ব্যবসার যা আছে, তা-ই রক্ষা করতে তাঁর সরকার ব্যর্থ। অধীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘নৌকাডুবি, সেতুভঙ্গ বা অগ্নিকাণ্ড— সবেতেই বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজ্য সরকার মুখ থুবড়ে পড়ছে। সরকারের গোয়ার্তুমির ফলে বিপর্যয় মোকাবিলায় সেনা বা অন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দফতরের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে না।’’সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মানব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সেতু ভাঙার ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করা ও শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার মাঝেরহাটে সভা করবে কলকাতা জেলা সিপিএম। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাতেও পথে নেমে প্রতিবাদ হবে তবে তার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি।
বিজেপি নেতারাও দাবি তুলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে ‘চক্রান্ত’ ফাঁস করে অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে। তাঁদের সন্দেহ, আগুন লাগানো হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের মতে, ‘‘নন্দরাম মার্কেটে আগুন নেভাতে বাগড়ি মার্কেটের জলাধার কাজে লেগেছিল। কিন্তু এখন দেখা গেল, সেই জলাধারে জলই নেই! তার মানে কি জলাধার জলশূন্য করে রাখারও চক্রান্ত ছিল?’’