নাজেহাল: চিকিৎসা করাতে এসেও রক্ষা নেই জমা জলের থেকে। বুধবার, এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে। নিজস্ব চিত্র
আমার বাড়ি হাওড়া পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীকিষাণ ভগত লেনে। বিয়ের পর থেকেই দেখছি, এখানে বর্ষায় জল জমে। বৃষ্টির জল আর নর্দমার জল একাকার হয়ে জমে থাকে গলিতে। তবে পাঁচ বছর আগেও জল দু’-এক দিনের মধ্যে নেমে যেত। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, ততই জল নামতে সময় লাগছে বেশি। জল জমছেও আগের থেকে বেশি। নর্দমার পাঁক পরিষ্কার না হওয়ায় বৃষ্টি হলেই নর্দমার জল উপচে রাস্তায় জমছে। এলাকা দুর্গন্ধে ভরে যাচ্ছে। পোকা-মাকড়, সাপ-ব্যাঙ ঢুকে পড়ছে বাড়িতে।
কিন্তু এ বছরের অবস্থা আগের সব বছরকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহের বুধ-বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে জমা জল সাত দিনেও নামেনি। গত সপ্তাহে সদর দরজার তিন ফুট সিঁড়ি ছাপিয়ে জল উঠে এসেছিল একতলায়। ডুবে গিয়েছিল খাওয়ার জল তোলার পাম্প। পুরসভার কল থেকে পোকাওয়ালা কালো জল বেরোচ্ছিল। পাশের পাড়ায় কেব্ল ফল্ট হওয়ায় টানা তিন দিন লোডশেডিং চলেছে। তিন দিন পরেও জল না নামায় আমার ছেলে-সহ পরিবারের কয়েক জন চলে গিয়েছিল মন্দিরতলায়, আমার মেয়ের কাছে। পাঁচ দিন পরে ফিরেছে তারা।
এখনও রাস্তায় ৬ ইঞ্চির বেশি জল জমে রয়েছে। দোকানপাট বন্ধ। কিছুটা দূরে কদমতলা থেকে বাজার করা খুব অসুবিধার। তাই বাজার যাওয়াও প্রায় বন্ধ। ডিম-ভাত খেয়েই দিন কাটাচ্ছি। অফিসে বা কোথাও যেতে হলে এখানকার সকলকেই আলাদা করে জামা, প্যান্ট নিয়ে বেরোতে হচ্ছে। সব থেকে সমস্যায় পড়েছে দেওরের মেয়ে। কলেজে ভর্তির ফর্ম ফিল আপ করতে ওকে এই জলের মধ্যে দিয়ে সাইবার কাফে যেতে হচ্ছে। কোনও টোটো বা রিকশা জমা জলের ভয়ে এই গলিতে ঢুকতে চায় না। ফলে জল ঘাঁটা ছাড়া উপায়ও নেই আমাদের।
আগে নিয়মিত নর্দমা থেকে পাঁক তুলতে আসতেন পুরসভার লোকজন। বর্ষার আগে ভাল করে নর্দমা সাফাই হত। কিন্তু সে সব আর হয় না। ফলে নর্দমাগুলো শুকনো সময়েও ভরে থাকে। বৃষ্টির জল যাবে কোথায়? শুনেছি ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সমস্ত জমা জল আমাদের এলাকায় জমা হয়। কারণ এই এলাকা বাটির মতো। আমাদের বাড়ি কিছুটা উঁচু হওয়ায় জল খুব বেশি ঢোকেনি। কিন্তু পাশের অনেক বাড়ির একতলায় জল রয়েছে এখনও। বিছানার উপরে টেবিল তুলে রান্না করছেন তাঁরা। নোংরা জল ঘেঁটে মানুষের রোগ হওয়ার উপক্রম।
আমার প্রশ্ন হল, একটু বেশি বৃষ্টি হলেই কেন এমন পরিস্থিতি হবে? এই ভাবে কি মানুষ বাস করতে পারে? খুব অসহায় লাগে, রাগও হয়। পুরসভার কি কোনও ভূমিকা নেই? পুর প্রতিনিধিরাই বা কোথায়? আমি ঠিক করেছি, আর ভোট দেব না। এ দিন ফের বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও জোরে, কখনও ঝিরঝিরে। জমা জলের উপরে আরও জল জমছে। বাড়ছে চিন্তাও। এই দুর্দশা থেকে কি মুক্তি নেই?
লেখিকা শ্রীকিষাণ ভগত লেনের বাসিন্দা