কয়েক মাস আগেই শিশু নিগ্রহের অভিযোগে দমদম জেলে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে এসেছেন মার্কিন নাগরিক লেসলি পাওয়েল। কিন্তু মার্কিন মুলুকের বাসিন্দা তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করার কোনও উপায় নেই। বিস্তর টাকাকড়ি খরচ করে তাঁদের পক্ষে কলকাতায় দমদম সেন্ট্রাল জেলে এসে লেসলির সঙ্গে দেখা করা কার্যত অসম্ভব।
ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা প্রদীপ কুমারের সমস্যা আবার অন্য। সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত বছর পঁয়ত্রিশের বন্দি প্রদীপের বাবা-মা তাঁর সঙ্গে মাঝেমধ্যে তা-ও এসে দেখা করতে পারেন। কিন্তু এলেই যে দেখা হবে, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। সকালে এসে আবেদন করতে হবে। জেলের অফিসারেরা তাঁদের আবেদন, পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখবেন। সন্তুষ্ট হলে তবেই মিলবে দেখা করার অনুমতি। না-মিললে এত কাঠখড় পুড়িয়ে দমদম জেলে আসাই বিফলে চলে যাবে।
বন্দিদের এই সব সমস্যা সমাধানে এ বার অনলাইনে ‘ইন্টারভিউ’ ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবছে কারা দফতর। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে রাজ্যের প্রথম সংশোধনাগার হিসেবে দমদম সেন্ট্রাল জেলে শুরু হয়েছে অনলাইনে আগাম ইন্টারভিউয়ের অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া। সফল হলে রাজ্যের সব জেলে এই প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়া হবে। আর তার পরের ধাপে শুরু হবে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বন্দির দেখা করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা। কারা দফতরের এডিজি অরুণ কুমার গুপ্তের কথায়, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বন্দিদের দেখা করার ব্যবস্থা চালু করা। তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ হল, অনলাইন ইন্টারভিউ বুকিং। দমদমে গত মাস থেকে আমরা এই প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’’
শুধু বন্দিদের সুবিধেই নয়, অনলাইন ইন্টারভিউ বুকিং এবং ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দেখা করার প্রক্রিয়া শুরু হলে নিরাপত্তার দিকটি অনেক বেশি নিশ্চিত করা যাবে বলে মনে করছেন কারা দফতরের কর্তারা। এক কারা-কর্তার কথায়, ‘‘বন্দিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-বন্ধুদের দেখা করার সময়ে নানা বেআইনি জিনিসপত্র পাচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নজরদারির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পাচার হয় নানা তথ্যও। ভিডিও কনফারেন্সিং চালু হলে ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দিদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব হবে।’’
জেলের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা নতুন নয়। আমেরিকান সেন্টার এবং খাদিম হত্যা মামলার মূল অভিযুক্ত আফতাব আনসারিকে নিরাপত্তার কারণে কয়েক বছর থেকেই জেলের বাইরে বের না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা দফতর। আফতাবের মামলার শুনানি হয় জেলের মধ্যে— ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে। সম্প্রতি নিরাপত্তাজনিত কারণে আরও অনেক বন্দিদের ক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শুনানির প্রক্রিয়াও চালু করেছে কারা দফতর। এ বার একই কায়দায় বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা শুরু হতে চলেছে।
পাশাপাশি, বন্দিদের পরিবারের ক্ষেত্রেও এই প্রক্রিয়া খুবই সাহায্য করবে বলে মনে করছেন কারা-কর্তারা। নতুন প্রক্রিয়ায় কারা দফতর নির্দিষ্ট করে দেওয়া একটি ওয়েবসাইটে গিয়ে একট আবেদনপত্র পূরণ করতে হচ্ছে। আবেদনপত্র পূরণের পরে একটি ‘ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড’ দেওয়া হচ্ছে। ওই পাসওয়ার্ড দিয়ে ‘লগ-ইন’ করলেই জানা যাচ্ছে, দেখা করার অনুমতি মিলেছে কি না, মিললে কবে, কোন সময়ে। সাধারণত দেখা করার দিন পনেরো আগে এই আবেদন করা যাচ্ছে। অনুমতি মিললে, জেলের দেওয়া সময়ের মাত্র আধ ঘণ্টা আগে এলেই ছবি তুলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে। সেখানে আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট বন্দি বসে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে যাচ্ছে বাড়ির লোকেদের।
কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আগে এই প্রক্রিয়াটাই ছিল লম্বা। আর অনুমতি বাতিল হলে পুরো দিনটাই নষ্ট। এ ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনাই নেই।’’ ওই কর্তার আরও দাবি, ‘‘এ ক্ষেত্রে বন্দির বাড়ির লোকেদের যেমন হয়রানি কমছে, তেমনই ভিজিটরদের যাবতীয় তথ্য জমা হয়ে থাকছে জেলের কাছে। এমনকী ছবিও। ভবিষ্যতে কারা দেখা করতে এসেছিল, তার হিসেবও মিলছে।’’