গুলি চালিয়ে পোস্তার দোকানে ‘লুঠ’ ১ কোটি

একটি ডাকাত-চক্র ধরার পরে ৪৮ ঘণ্টাও পেরোল না। ফের নতুন ডাকাতি শহরে। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার পোস্তার হরিরাম গোয়েনকা স্ট্রিটের একটি সোনার দোকানে গুলি চালিয়ে ১ কোটি টাকা লুঠ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:১২
Share:

একটি ডাকাত-চক্র ধরার পরে ৪৮ ঘণ্টাও পেরোল না। ফের নতুন ডাকাতি শহরে। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার পোস্তার হরিরাম গোয়েনকা স্ট্রিটের একটি সোনার দোকানে গুলি চালিয়ে ১ কোটি টাকা লুঠ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোল ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। দেওয়ালে একটি গুলির চিহ্ন মিলেছে। তবে এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

Advertisement

গত কয়েক সপ্তাহে হরিদেবপুর, রিজেন্ট পার্ক, গল্ফগ্রিনে ডাকাতি হয়েছিল। শুক্রবার রাতে হানা দিয়ে সেই ডাকাতিতে অভিযুক্ত চক্রের কয়েক জনকে পাকড়াও করেছিল লালবাজার। কিন্তু গোয়েন্দাদের সেই কৃতিত্বকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে সোমবার পোস্তার ডাকাতিতে জড়িত থাকা অপরাধীরা।

কী ঘটেছে এ দিন পোস্তায়?

Advertisement

পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ স্থানীয় দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্কে জমা করার জন্য নগদ ১ কোটি টাকা একটি ব্যাগে ভরে ভল্টে তুলে রেখেছিলেন ওই দোকানের কর্মীরা। অভিযোগ, সেই সময়ে চার জন সশস্ত্র যুবক এসে দোকানের শাটার নামিয়ে দেয়। গুলি চালিয়ে, বন্দুক দেখিয়ে তারা ভল্ট খুলতে বাধ্য করে কর্মীদের। এর পরেই টাকার ব্যাগটি কেড়ে নিয়ে পালায় ওই দুষ্কৃতীদল। যাওয়ার সময়ে নিয়ে যায় দুই কর্মীর মোবাইল ফোনও। ঘটনার সময়ে দোকানের মালিক প্রদীপ গুপ্ত দোকানে ছিলেন না। ফিরে এসে ঘটনার কথা জানতে পারেন। তিনিই পোস্তা থানায় খবর দেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় বা দোকানে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। ফলে ঘটনার সময়ে ঠিক কী হয়েছে, তার কোনও ছবি মেলেনি। তাই ঘটনাটা ঠিক কী ঘটেছে, তা নিয়ে দোকানের কর্মী ও মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। ডিসি ( সেন্ট্রাল) বাস্তব বৈদ্য বলেন, ‘‘কী ঘটেছে, সে সম্পর্কে প্রাথমিক ভাবে কিছু কিছু সূত্র মিলেছে। গোটা ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

পুলিশের একাংশই বলছে, একটি ডাকাতচক্রকে পাকড়াও করার দু’দিন কাটতে না কাটতেই ফের ডাকাতির ঘটনা খুব চিন্তার। কারণ, এতে অপরাধীরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জানিয়েছে যে, পুলিশি সক্রিয়তার ভয় তাদের নেই। উপরন্তু শহরে সক্রিয় থাকা অপরাধ-চক্র সম্পর্কে পুলিশি নেটওয়ার্ক কতটা ওয়াকিবহাল, সে প্রশ্নও উঠেছে।

লালবাজারের একাধিক সূত্র অবশ্য নেটওয়ার্কের ব্যর্থতা পুরোপুরি মেনে নিতে নারাজ। একই সঙ্গে তাঁরা আঙুল তুলছেন থানার সঙ্গে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের সমন্বয়ের অভাবের দিকেও। গোয়েন্দা বিভাগের এক অফিসার বলছেন, অপরাধচক্রের দাপট কমাতে থানার সঙ্গে গোয়েন্দা বিভাগের সমন্বয় জরুরি। কিন্তু ইদানীং অনেক ক্ষেত্রেই থানা এলাকায় ছিনতাই বা ছোটখাটো চুরি-লুঠের ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা বিভাগকে জানানো হয় না। তার ফলে অনেক ঘটনা গোয়েন্দাদের অগোচরে থেকে যায়। এক গোয়েন্দা অফিসারের পর্যবেক্ষণ, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় থানার অফিসারদের সঙ্গে গোয়েন্দা অফিসারদের একটা রেষারেষি দেখা যাচ্ছে। এটা কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক।’’

এই সূত্র ধরেই গোয়েন্দাদের একাংশ দাবি করছে, শনিবার রাতে বেনিয়াপুকুরের কিশোরের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাতেও এই সমন্বয়ের অভাব প্রকট। ওই এলাকায় যে সব দুষ্কৃতী ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের গতিবিধি নজরে রাখার ক্ষেত্রে থানা লালবাজারকে জানায়নি। এমনকী, কয়েক জন অভিযুক্তের জামিন পাওয়ার পিছনে থানার একাংশের গাফিলতি রয়েছে বলেও লালবাজারের কর্তারা জানাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, গুলি চলার পরেই গুন্ডাদমন শাখাকে ধরপাকড়ে নামানো হয়েছে। এ দিন সকালে ওই ঘটনায় বাপি, কালো এবং কাল্টা শামিম নামে তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র। মূল অভিযুক্ত সরফু পলাতক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement