উদ্ধার হওয়া সেই সোনার যন্ত্রাংশ। নিজস্ব চিত্র
প্রতিদিন ব্যবহার করা গেরস্থালির সরঞ্জামকেও এ বার পাচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক পাচারকারীরা। সোমবার, দোলের দিন কলকাতায় আসা এক বিমানযাত্রীর কাছ থেকে যে চোরাই সোনা পাওয়া গিয়েছে, তা লুকোনো ছিল মাইক্রোওয়েভ আভেনের ভিতরে। লুকোনো বলতে, আভেনের দু’টি যন্ত্রাংশ ছিল সোনার তৈরি। যাতে কোনও ভাবেই শুল্ক অফিসারদের সন্দেহ না-হয়।
এ ভাবে প্রায় ৮৩ লক্ষ টাকার চোরাই সোনা আনার পরে গ্রেফতার করা হয়েছে ইমরান নামে ওই যাত্রীকে। পরে আদালতে তোলা হলে তিনি জামিন পান। শুল্ক দফতর সূত্রের খবর, আইন অনুযায়ী এক কোটি টাকার কম মূল্যের সোনা আনলে জামিন পেয়ে যান অভিযুক্ত। সেই নিয়ম সম্পর্কে এখন পাচারকারীরা ওয়াকিবহাল। তাই কেউই এক কোটি টাকার বেশি মূল্যের সোনা আনেন না।
শুল্ক দফতর জানিয়েছে, ইমরান উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। তাঁর পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, গত দু’বছরে তিনি বার পাঁচেক দুবাই যাতায়াত করেছেন। প্রতি বারই ভিন্ন ভিন্ন শহর থেকে। কখনও দিল্লি, কখনও মুম্বই, কখনও আবার হায়দরাবাদ হয়ে গিয়েছেন তিনি। শুল্ককর্তাদের আশঙ্কা, প্রতি বারেই ওই যুবক সোনা পাচার করেছেন। তবে এর আগে ধরা পড়েননি। সোমবার তাঁর পাসপোর্ট দেখে প্রথমে সন্দেহ হয় অফিসারদের। এত কম সময়ের মধ্যে বারবার দুবাই যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি ইমরান।
সাধারণত অনেক ছোট ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাঁরা ভারত থেকে মূলত জামাকাপড়, বৈদ্যুতিন সামগ্রীর ব্যবসার জন্য নিয়মিত দুবাই, ব্যাঙ্কক, হংকং, বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুরে যাতায়াত করেন। এঁদের ‘কেরিয়ার’ বলা হয়। ইমরানও সেই কেরিয়ারদের এক জন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এত ঘনঘন নির্দিষ্ট একটি শহরে তাঁর যাতায়াতের নথি দেখে সন্দেহ দৃঢ় হয় অফিসারদের।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সোমবার শহরে নেমে ভাবলেশহীন মুখে গ্রিন চ্যানেল দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন ইমরান। সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে আটকে জিনিসপত্র তল্লাশি শুরু করেন অফিসারেরা। দেখা যায়, আভেনের ট্রান্সফর্মার হিসেবে পাইপের মতো দেখতে দু’টি সোনার তৈরি সিলিন্ডার বসানো রয়েছে। আর কুকিং প্লেটের জায়গায় বসানো রয়েছে সোনার তৈরি প্লেট। চারটি সোনার টুকরোর ওজন ১ কিলোগ্রাম ৮৬৪ গ্রাম। যার বাজারদর ৮৩ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা।
অন্য দিকে, সোমবারই রিয়াধ থেকে দোহা হয়ে কলকাতায় নামার পরে আর এক যুবকের কাছ থেকে সোনা পান শুল্ক অফিসারেরা। রায়গঞ্জের বাসিন্দা ওই যুবক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি রিয়াধে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। টাকা জমিয়ে ওই সোনা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কিনেছিলেন। লুঙ্গি এবং টর্চের মধ্যে লুকিয়ে আনা চারটি সোনার টুকরোর পরিমাণ ছিল ৩৮৪ গ্রাম। যার বাজারদর ১৭ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। নিয়ম অনুযায়ী, ২০ লক্ষ টাকার কম মূল্যের সোনা আনলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে গ্রেফতার করা যায় না। তাই সোনা বাজেয়াপ্ত করে ওই যুবককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।