সন্ধ্যায় বাসের সংখ্যা আরও কমে যায়। ফাইল চিত্র।
সরকার অর্ধ দিবস ছুটি দেওয়ায় যাত্রী কম পাওয়ার আশঙ্কা ছিলই। তবে তার চেয়েও বেশি চেপে ধরল জরিমানার ভয়। সোমবার, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে এই জোড়া আতঙ্কে রাস্তায় বেসরকারি বাস নামল অর্ধেকেরও কম। সকালের ব্যস্ত সময়ে এসপ্লানেড, এক্সাইড, রুবি, উল্টোডাঙা, বি টি রোড, কামালগাজি, খিদিরপুর, বি এন আর এবং সাঁতরাগাছিতে একই ছবি ধরা পড়েছে। সরকারি নন-এসি বাসের সংখ্যা যথেষ্ট না থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এর পরে সন্ধ্যায় বাসের সংখ্যা আরও কমে যায়। সঙ্কট কাটাতে এ দিন বেসরকারি বাস, মিনিবাস, অ্যাপ-ক্যাব এবং পুলকার সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ‘জয়েন্ট ফোরাম অব ট্রান্সপোর্ট অপারেটর্স’-এর তরফে সমস্যার কথা চিঠি দিয়ে পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে জানানো হয়েছে। এ দিন যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধিরা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেন।
জয়েন্ট ফোরাম সূত্রের খবর, আর্থিক সঙ্কটের কারণে ৩৫-৪০ শতাংশ বেসরকারি বাসের ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ নেই। নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে ওই শংসাপত্র না নিলে দিনে ৫০ টাকা করে জরিমানা গুনতে হয়। নয়া জরিমানা-বিধিতে এককালীন ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধানও রয়েছে। এই আশঙ্কাতেই বাস কমছে বলে অভিযোগ। নয়া বিধিতে জরিমানার অঙ্ক বিপুল হওয়ায় রাস্তায় দুর্নীতির বাড়বাড়ন্তের আশঙ্কাও করছেন পরিবহণ ব্যবসায়ীদের একাংশ। এ দিন ফোরামের দেওয়া চিঠিতে নয়া জরিমানা বিধি নিয়ে সংশয়ের অবকাশ থাকা একাধিক বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে।
নয়া বিধিতে ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ না থাকার জরিমানা ১০ হাজার টাকা এবং বৈধ রেজিস্ট্রেশন না থাকার জরিমানা পাঁচ হাজার টাকা। অথচ, একত্রে দু’টি অপরাধের ক্ষেত্রে মোটর ভেহিক্ল আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ জরিমানা পাঁচ হাজার টাকা। ‘ডিজি লকার’ চালু হওয়ায় গাড়ির নথি বহন করা বাধ্যতামূলক নয়। তা অ্যাপে দেখানোর সুযোগ আছে। নথি দেখাতে ১৫ দিন সময়ও মেলে। কিন্তু অভিযোগ, তা সত্ত্বেও নথি দেখাতে না পারায় জরিমানা করছে পুলিশ। মোটর ভেহিক্ল আইনে পুলিশ ও মোটরযান পরিদর্শকদের কাজের পরিসর নির্দিষ্ট করা আছে। পুলিশের কাজ মূলত ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ট্র্যাফিক বিধি ভাঙার বিষয়টি দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু প্রায়ই তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পরিবহণ দফতরের অনুমোদিত কেন্দ্র থেকে দূষণ পরীক্ষা করানোর শংসাপত্র থাকা সত্ত্বেও পুলিশের পরীক্ষায় জরিমানার মুখে পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়াও রাস্তার ধারে বিশেষ যন্ত্র দিয়ে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে পরীক্ষা করেও জরিমানা করা হচ্ছে। এমনকি, বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্যও জরিমানার চিঠি এসেছে বলে অভিযোগ। জরিমানার অঙ্কও বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে অনেকেরই প্রশ্ন, দূষণ কমানো না জরিমানা আদায়, কোনটা সরকারের উদ্দেশ্য, তা বোঝা যাচ্ছে না। রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশের ‘সাইটেশন কেস’ দেওয়া নিয়েও অভিযোগ জানিয়েছে ফোরাম। আইনে ওই ক্ষেত্রে মামলা করার বিধান না থাকলেও রাস্তায় পুলিশ যথেচ্ছ ভাবে এই মামলা দিয়ে বিপুল জরিমানা আদায় করছে বলে অভিযোগ। লালবাজারের কর্তাদের অবশ্য ব্যাখ্যা, মোটর ভেহিক্ল ইনস্পেক্টরদের সঙ্গে রেখেই মামলা করা হয়।
এ দিন ফোরামের প্রতিনিধিরা জানান, পরিবহণমন্ত্রী তাঁদের অভিযোগ শুনে তা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। আলোচনায় তাঁরা সন্তুষ্ট। পরে পরিবহণমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিএফের ক্ষেত্রে জরিমানায় এককালীন ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ট্র্যাফিক আইন প্রয়োগে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা জানানোর জন্য আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করা হবে। বিকেলে সরকারি বাসের সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। পরে মন্ত্রী ট্র্যাফিক বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন বলে খবর।