ছেলে-বৌমা খেতে দেননি তিন দিন, থানার দ্বারস্থ বৃদ্ধা

ভাঙড় থানার ওসি হাবুল আচার্য জানান, বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ এসে ওই বৃদ্ধা কাঁদতে শুরু করেন। ছেলে ও পুত্রবধূ গত তিন দিন ধরে তাঁকে খেতে দেননি বলে অভিযোগ। তারই সঙ্গে জানান যে এ দিন তাঁরা তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯ ০০:৪৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

ছেলে ও পুত্রবধূ ভরদুপুরে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে মাকে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠল। এর পরে বছর ৮০-র ওই বৃদ্ধা কোনও রকমে স্থানীয় এক রিকশাচালককে অনুরোধ করে ভাঙড় থানায় পৌঁছন। লাঠিতে ভর দিয়ে থানার ওসি-র কাছে তাঁকে নিয়ে যান ওই রিকশাচালকই।

Advertisement

ভাঙড় থানার ওসি হাবুল আচার্য জানান, বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ এসে ওই বৃদ্ধা কাঁদতে শুরু করেন। ছেলে ও পুত্রবধূ গত তিন দিন ধরে তাঁকে খেতে দেননি বলে অভিযোগ। তারই সঙ্গে জানান যে এ দিন তাঁরা তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন। এর পরে বৃদ্ধার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয় থানাতেই। তাঁর কাছ থেকে বাড়ির ঠিকানা জেনে ছেলে ও পুত্রবধূকে তুলে আনার নির্দেশ দেন ওসি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তাঁদের থানায় নিয়ে আসেন পুলিশকর্মীরা।

পুলিশ সূত্রের খবর, বৃদ্ধার নাম আলতামণি নস্কর। তাঁর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। ভাঙড়ের চণ্ডী এলাকায় ছোট ছেলে দেবদাস নস্কর ও পুত্রবধূ মৌসুমীর সঙ্গে থাকেন তিনি। আলতামণি জানিয়েছেন, তিনি সরকারি বিধবা ভাতা পান। কিন্তু ছেলে ও বৌমা তাও কেড়ে নেন বলে অভিযোগ। অধিকাংশ দিনই তাঁকে খেতে দেওয়া হয় না। তিনি অসুস্থ। লাঠি ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। তা সত্ত্বেও পুত্রবধূ তাঁকে মারধর করেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন আলতামণি।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বৃদ্ধার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতেই ছেলে ও পুত্রবধূকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ছেলে-বৌমার সামনে পুলিশ আধিকারিকদের কাছে অভিযাগ জানান আলতামণি। তদন্তকারীদের বক্তব্য, ছেলে ভাঙড় (১) ব্লকের ভূমি রাজস্ব অফিসে মুহুরির কাজ করেন। ওই বৃদ্ধার অভিযাগ শোনার পরে ছেলে ও বৌমাকে জানানো হয়, এ বার প্রথম ও শেষ সুযোগ দেওয়া হল। এর পরে যদি মায়ের উপরে কোনও মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ আসে, তা হলে হাজতবাসের ব্যবস্থা করা হবে এবং কর্মস্থলেও পুলিশের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে। পুলিশের গাড়িতে বৌমার সঙ্গে আলতামণিকে বাড়ি ফেরত পাঠানো হয়। পুলিশ জানায়, আলতামণিকে নিয়ে আসা রিকশাওয়ালাকে অনুরোধ করা হয়েছে যে ওই বৃদ্ধার উপরে অত্যাচারের খবর পেলেই তিনি যেন থানায় খবর দেন। হাবুলবাবুর কথায়, ‘‘ওই এলাকার সিভিক ভলান্টিয়ারকেও খোঁজ রাখতে বলা হয়েছে। ছেলেকে সতর্ক করা হয়েছে। এক জন মহিলা পাঁচ ছেলে-মেয়েকে বড় করলেন। আর তাঁদের এক জনও মাকে দেখাশোনা করতে পারছেন না। পরে অভিযোগ এলে আলতামণির সব ছেলে-মেয়েকে থানায় ডেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দেবদাসকে জানিয়ে দেয় পুলিশ।

থানা থেকে বেরিয়ে ছেলে দেবদাস পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘‘মা খুব বদ মেজাজি। দিদি ও দাদাদের সঙ্গেও বনিবনা হয় না। আমিই মাকে আমার কাছে রেখেছি। মা-ই জোর করে বিয়ে দিয়েছিল। এখন স্ত্রীর সঙ্গেও বনিবনা হচ্ছে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি স্ত্রীকে সংযত করার চেষ্টা করি। কিন্তু মা ও স্ত্রী কেউই কথা শোনে না। এ বার ভাল হয়েছে। অশান্তি হলে পুলিশই ব্যবস্থা নেবে। আমি বড়বাবুকে গোটা পরিস্থিতি জানিয়ে এসেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement