প্রতীকী ছবি।
দুপুর থেকে রাস্তায় শুয়ে ছিলেন ভবঘুরে প্রৌঢ়। শারীরিক কোনও অসুস্থতায় ছটফটও করছিলেন। কিন্তু তিনি যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, সেই আতঙ্কে সামনে গেলেন না কেউই। উল্টে তাঁর ছোঁয়াচ এড়াতে অন্য রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করলেন অনেকে। সন্ধ্যায় বিষয়টি জানতে পেরে যত ক্ষণে পুলিশ পৌঁছল, তত ক্ষণে মৃত্যু হয়েছে ওই প্রৌঢ়ের।
বুধবার এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল বেলুড়। করোনা পরিস্থিতিতে বার বার অভিযোগ উঠছে, বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় অসুস্থ হয়ে কেউ পড়ে থাকলেও তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাচ্ছেন না অধিকাংশ লোকজনই। এ দিনও তেমনটাই ঘটেছে বেলুড়ের আনন্দগোপাল মুখার্জি রোডে। পুলিশ জানায়, অজ্ঞাতপরিচয় ওই প্রৌঢ়ের আনুমানিক বয়স ৫৫। তাঁকে প্রায় প্রতিদিনই বেলুড় মঠের আশপাশের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত। ভবঘুরে হিসেবে পরিচিত ওই প্রৌঢ়কে এলাকার অনেকে খেতেও দিতেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, জি টি রোডের সঙ্গে বেলুড়ের ভিতরের এলাকাকে যুক্ত করেছে আনন্দগোপাল মুখার্জি রোড। রাস্তার এক দিকে রয়েছে রেললাইন, অন্য দিকে কারখানা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ রাস্তায় বসে ছিলেন ওই প্রৌঢ়। কিছু ক্ষণ পরে তিনি রাস্তার মধ্যে শুয়ে পড়েন। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘রাস্তায় শুয়েই খুব হাঁপাচ্ছিলেন ওই প্রৌঢ়। কী থেকে হাঁপানি হচ্ছে তা বুঝতে না পেরে কেউ এগোননি।’’ দুপুরে বৃষ্টির মধ্যেও রাস্তাতেই পড়ে থেকে ভিজেছেন তিনি। তা দেখেও কেউ এগিয়ে আসেননি। বেশির ভাগ পথচারীই ওই রাস্তা ছেড়ে পাশের অন্য রাস্তা ব্যবহার করে জি টি রোডে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় বেলুড় থানা কিংবা জি টি রোডে বালি ট্র্যাফিকের পোস্টেও কেউ খবর দেননি বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: বাবার পচাগলা দেহ আগলে মেয়ে
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ স্থানীয় এক ব্যক্তির সূত্রে জানতে পেরে ট্র্যাফিক পোস্ট ও থানা থেকে পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তাঁরা দেখেন, রাস্তাতেই বমি করে চিৎ হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন প্রৌঢ়। এর পরে পুলিশের মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি এসে দেহটি তুলে নিয়ে যায়। এক পুলিশকর্মীর আক্ষেপ, ‘‘কেউ আগে খবর দিলে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অন্তত বাঁচানোর চেষ্টা করা যেত ওই প্রৌঢ়কে।’’