— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পাবদা মাছের পরিবর্তে জলাশয়ে ফেলা হয়েছিল কম দামি ল্যাটা ও শোল মাছ। মিলেছিল বেশ কিছু মরা মাছও। তারই প্রতিবাদ করেছিলেন চিংড়িঘাটা সংলগ্ন রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের অধীনে থাকা গোলতলা জলাশয়ের অস্থায়ী কর্মীরা। অভিযোগ, তার পরেই তিন জন কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাঁচ জনকে বদলি করা হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নিগমের বিভিন্ন প্রকল্পে। পুরো ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ওই কর্মীরা মৎস্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। দুর্নীতির প্রতিবাদ জানানোয় রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মীদের বদলি করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন নিগমের কর্মী ও আধিকারিকদের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও।
রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের অধীনে সারা রাজ্যে ২২টি বৃহৎ জলাশয় রয়েছে। যার মধ্যে একটি গোলতলা। ১১০ হেক্টর জায়গা জুড়ে থাকা ওই জলাশয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হয়। নিগম সূত্রের খবর, মাস তিনেক আগে সেখানে এক দিনে প্রায় ছ’হাজার পাবদা মাছের চারা ছাড়ার কথা ছিল। নিয়ম মতো চারা মাছ ছাড়ার আগে কর্তব্যরত কর্মীরা তা পরীক্ষা করে নেন। সে দিন কর্তব্যরত দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মীদের চোখে পড়ে, প্যাকেটের বেশির ভাগ মাছই ল্যাটা। ছিল কিছু শোল মাছও। আবার অনেক মাছই মরা ছিল বলে অভিযোগ। এক কর্মীর অভিযোগ, ‘‘মাছের চারা রীতিমতো চুরি হচ্ছিল। বড়সড় দুর্নীতির আঁচ পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিষয়টি লঘু করে দেখছিলেন। কিন্তু তাতেও আমরা প্রতিবাদে অনড় থাকায় আট জনের মধ্যে তিন জনের নাম হাজিরা খাতা থেকে কেটে দেওয়া হয়। পাঁচ জনকে দূরের জেলায় বদলি করা হয়।’’ আর এক কর্মীর প্রশ্ন, ‘‘আমরা ১১ মাস বেতন পাইনি। ঘরের কাছে থাকায় কোনও রকমে ধারদেনা করে চলছিল। এ বার দূরে বদলি হওয়ায় কী ভাবে সংসার চলবে?’’ অভিযোগ, কর্মীরা প্রতিবাদ করায় ডিসেম্বর মাসে হাজিরা খাতায় সই করলেও তা কেটে দিয়ে পাশে লাল কালিতে অনুপস্থিত লিখে দেওয়া হয়েছে।
নিগমের আধিকারিকদের একাংশেরও অভিযোগ, মাছের চারা কেনার নামে মোটা টাকার দুর্নীতি হচ্ছে। অথচ, কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। তাঁদের দাবি, তদন্ত করলে প্রমাণিত হবে, দুর্নীতিতে উপরতলার আধিকারিকেরা জড়িত। নিগমের এক আধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘দফতরের মন্ত্রীর ভাই, সচিবের গাড়িচালক-সহ ছ’জন আধিকারিকের নামে বেআইনি ভাবে নিগমের কোষাগার থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা তোলা হচ্ছে। সেই খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তদন্ত করলে দেখা যাবে, গোটা দফতরে পরতে পরতে দুর্নীতি। স্বচ্ছতা না ফিরলে কাজ করা খুব মুশকিল।’’
গোলতলা প্রকল্পের অধিকর্তা সোমেন চক্রবর্তীকে ফোন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। নিগমের অধিকর্তা বিশ্বনাথকে একাধিক বার ফোন ও মেসেজ করেও উত্তর মেলেনি। মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি বাইরে আছি। খোঁজ নিয়ে কথা বলব।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘মৎস্য দফতরে মাৎস্যন্যায় চলছে। ওই দফতর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত। প্রতিবাদ করায় কর্মীদের তিরস্কার জুটছে। আর মন্ত্রীর ভাই, সচিবের গাড়িচালকের নামে গাড়ির মোটা টাকার বিল বেআইনি ভাবে তোলা হচ্ছে।’’