গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ড থেকে প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়ার শারীরিক নিগ্রহ— বিভিন্ন সময়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কলকাতা পুলিশকে। আনন্দপুর-কাণ্ডের পর আবারও রাতের শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও এতে চিন্তার কোনও কারণ নেই বলে মনে করছেন লালবাজারের কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাতের শহরে নিরাপত্তার উপরে আরও জোর দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা নির্দেশ দিয়েছেন, কেউ সাহায্য চাইলে, থানা এলাকা না দেখে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।
প্রতিটি থানা এবং বিভাগীয় ডিসিদের আরও সতর্ক থাকতে নির্দেশ গিয়েছে লালবাজার থেকে। তার ফল দেখা গিয়েছে মঙ্গলবার রাতেই। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নাকা তল্লাশি চলার সময় হাজির ছিলেন ডিসি পদমর্যাদার অফিসারেরা। সন্দেহ হলে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তল্লাশি করা হয়। চালক এবং আরোহীরা সদুত্তর দিতে না পারলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিয়েছেন পুলিশকর্মীরা। পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বলেন, “নজরদারি এবং নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে। শহরবাসীর কাছে অনুরোধ, কোনও সমস্যা হলেই ১০০ ডায়ালে ফোন করুন। কলকাতা পুলিশ আপনাদের পাশে সব সময় রয়েছে।”
বিপদে পড়লে, আর কী ভাবে সাহায্য মিলতে পারে?
যে কোনও থানায় অভিযোগ জানানো যেতে পারে। রাতে টহলদারির সময় পুলিশকে বললেই পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে থানাগুলোকে। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কলকাতা পুলিশের মহিলা টিম ‘উইনার্স’ গঠন করা হয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখার অফিসারদের সঙ্গে টহল দেবেন ‘উইনার্স’-এর পুলিশকর্মীরাও। হায়দরাবাদ বা উন্নাওয়ের ঘটনার পর শহরের মহিলাদের সুরক্ষার বিষয়টি আরও আঁটসাঁট করতেই উইনার্স-এর পরিকল্পনা।
নাগরিকদের সহায়তায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ফোন নম্বর— ১০০ ডায়াল (যে কোনও জরুরি প্রয়োজনে), ১০৯০ (যে কোনও তথ্যের জন্য), ১০৭৩ (ট্রাফিক সমস্যায়), ২২১৪-৩০২৪/২২১৪-৩২৩০/২২১৪-১৩১০ (লালবাজার কন্ট্রোল রুম)। তা ছাড়া কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইট-এ গেলে পদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের ফোন নম্বরও মিলবে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেখভালের জন্য কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ রয়েছে। সেখানে ১৫ হাজারের কাছাকাছি সদস্য রয়েছেন। তাঁদের বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও কলকাতা পুলিশের ‘বন্ধু’ অ্যাপের মাধ্যমেও সাহায্য মিলবে। রয়েছে প্যানিক বাটনও।
আরও পড়ুন: অনলাইনে ক্লাস চলার সময় ছাত্রীর বাড়িতে ডাকাত হানা
প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া ঊষসী সেনগুপ্ত, খিদিরপুরে দিনের বেলায় জাতীয় বক্সার সুমন কুমারী, টলি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনার পর পুলিশের পিসিআর ভ্যান রাতের শহরে টহল দিতে শুরু করেছে। ওই গাড়িতে এক জন অ্যাসিসট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর-সহ তিন জন পুলিশকর্মী থাকেন। সরাসরি লালবাজারের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন ওই গাড়িতে থাকা পুলিশ কর্মীরা। তাঁদের একটি করে ‘ট্যাব’ও দেওয়া হয়েছে। গাড়িতে লাগানো থাকবে জিপিএস সিস্টেম।
আরও পড়ুন: বডি বিল্ডাররা সুশির হোম ডেলিভারি দিচ্ছেন, ক্রেতা চাইলে করবেন পেশি প্রদর্শনও
কোনও জায়গার গন্ডগোল বা কোনও নিগ্রহের মতো ঘটনা ঘটার খবর কন্ট্রোল রুমে এলে ওই গাড়িতে থাকা পুলিশকর্মীদের ঘটনাস্থলের বিবরণ পাঠানো হবে ট্যাবে। ফলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে পুলিশ। ওই ভ্যানে থাকা পুলিশকর্মীরা প্রয়োজনে নিকটবর্তী থানা বা লালবাজার থেকে বাহিনী চেয়ে নিতে পারবেন।