Religion

‘করোনা কেয়া করেগা’, বিধি উড়িয়ে রাতপথে ভোলেবাবা-বাহিনী

মুখে মাস্ক নেই বেশির ভাগের। থাকলেও থুতনিতে ঝুলে। দল বেঁধে হন্টনরতদের পাশাপাশি মালবাহী কিছু খুদে গাড়িও পথে নেমেছে। তাতেও গিজগিজে ভিড়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০১:৪৩
Share:

অসচেতন: সোমবার, নিমতলার ভূতনাথ মন্দিরে। রবিবার রাতে দল বেঁধে মন্দির-যাত্রা। বেলগাছিয়া সেতু। ছবি: নিজস্ব চিত্র

মধ্যরাতের কলকাতায় এমন হামলার মুখে যে পড়তে হবে, করোনাভাইরাস-ও বোধহয় তা ভাবতে পারেনি।

Advertisement

রবিবার রাত ১২টা। কেওড়াতলা শ্মশানের সামনে কাঁধে বাঁকধারী ধাবমান ভক্তের দল সোল্লাসে চিৎকার করে উঠল, ‘ভোলেবাবা পার করেগা, করোনাভাইরাস কেয়া করেগা! করোনা আমাদের কিছু করতে পারবে না!’

মুখে মাস্ক নেই বেশির ভাগের। থাকলেও থুতনিতে ঝুলে। দল বেঁধে হন্টনরতদের পাশাপাশি মালবাহী কিছু খুদে গাড়িও পথে নেমেছে। তাতেও গিজগিজে ভিড়। পারস্পরিক দূরত্বের দফা রফা। এ দৃশ্য দেখে শ্মশানযাত্রীদের এক জন অস্ফুটে বলে ফেললেন, ‘‘সর্বনাশ! একসঙ্গে সবাইকে না ভাইরাসে ধরে।’’

Advertisement

অতিমারির দাপট যতই বাড়ুক, শ্রাবণ মাসে মহাদেবের মহা সোমবারই বুঝিয়ে দিল, কলকাতার শিবভক্তিতে মরচে ধরেনি মোটেও। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ লালবাজারে খবর গেল, নিমতলা মহাশ্মশানে প্রায় ৬০০-৭০০ লোক ভিড় করে দাঁড়িয়ে। এক পুলিশকর্তার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘অন্য বছর সোমবারের এই ভিড়টা দেড়-দুই কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। এ বার তা-ও কম।’’

করোনাতঙ্কে নিমতলার ভূতনাথ মন্দির অবশ্য এখন বন্ধ। তবু মন্দিরের সামনে জড়ো হয়ে শিবলিঙ্গে জল ঢালায় উৎসাহ বহাল রয়েছে। বন্ধ তারকেশ্বর মন্দিরও। তবু মন্দিরের বাইরে জল ঢালতে ভক্তেরা আসছেন। রাখিপূর্ণিমায় পুণ্যার্থীদের ঠেকাতে গার্ডরেলের পাহারা। তাঁদের আটকাল পুলিশ। কলকাতার রাস্তার দু’ধারে লঙ্গর খুলে পুণ্যার্থীদের সেবার আয়োজনও তত দেখা যাচ্ছে না এ বার।

কিন্তু রবিবার মধ্যরাতের শহর সাক্ষী রইল, এই শ্রাবণে কোভিড পরিস্থিতিতেও পুণ্যের নেশা নেহাত কমজোরি নয়। চেতলা, রাসবিহারী, কেওড়াতলা কিংবা কসবা-রাজডাঙায় পুণ্যার্থীরা রাতের রাজপথ মাতিয়ে চলেছেন। উত্তর বা মধ্য কলকাতার ছবিটাও আলাদা নয়। ধর্মতলা, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে বেলগাছিয়া সেতু— সর্বত্রই এক দৃশ্য। বেশির ভাগেরই গন্তব্য নিমতলার ভূতনাথ মন্দির। রাত সাড়ে ১২টায় ধর্মতলা মোড়ের সিগন্যালে মোটরবাইক আরোহীদের ভিড়। পরনে স্যান্ডো গেঞ্জি, বারমুডা। তাঁরাও চলেছেন ভূতনাথ অভিমুখে। বেলগাছিয়া সেতুর ঝাঁকটাকে প্রশ্ন করা গেল, কোথায় চলেছেন? তাঁদের জবাব, ‘‘ভূতনাথ মন্দির থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুর মন্দিরে চলেছি হেঁটে হেঁটে।’’

কলকাতা পুলিশের একটি অংশ জানাল, রাজ্যে এখনও লকডাউন উপলক্ষে নৈশ কার্ফু বলবৎ রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার আনলকের এই পর্বে রাত্রিকালীন যাতায়াতে বিধিনিষেধ আলগা করার কথা বলেছিল। তবে রাতের কলকাতায় কী করণীয়, তা নিয়ে কারও স্পষ্ট ধারণা নেই। যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার এ দিন প্রথমে বলেন, ‘‘এখনও রাতে বিধিনিষেধ আছে।’’ পরে ফোন করে বললেন, ‘‘এখন বিধিনিষেধ নেই।’’

লিখিত ভাবে অবশ্য সরকারি নির্দেশিকা নৈশ কার্ফু তোলার কথা বলছে না। তবে রাজ্য সরকারের গত ৩০ জুলাইয়ের নির্দেশিকায় আগের মতো রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত নৈশ কার্ফুর কোনও উল্লেখ নেই। সেটাই নৈশ কার্ফু তোলার নির্দেশ বলে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের অভিমত। কিন্তু সেই নির্দেশিকাতেও ধর্মীয় জমায়েত বা অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার কথাই বলা হয়েছে।

তা হলে এই পরিস্থিতিতে ভোলেবাবা-বাহিনী কী ভাবে ছাড়পত্র পেল শহরে? পুলিশের এক কর্তার উত্তর, ‘‘বারণ করবে কে?’’ চিকিৎসকদের অনেকের মত, জোরে হাঁটার সময়ে মাস্ক পরা বিপজ্জনক। কিন্তু জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক মধুমিতা দোবের কথায়, ‘‘মাস্ক না পরে হাঁটলে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব রাখা উচিত। তা ছাড়া সকলে এক জায়গায় জড়োও হচ্ছেন। যা পরিস্থিতি, এখন এত দূর হেঁটে গিয়ে জল ঢালা বন্ধ রাখাই হয়তো সঙ্গত হতো।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement