প্রতীকী ছবি
রাজ্যের দাবিই মান্যতা পেল। সাপ্তাহিক লকডাউনের দ্বিতীয় দিন, শনিবার কলকাতা থেকে একটিও যাত্রী-উড়ান চলল না।
কলকাতার আকাশ দিয়ে এক শহর থেকে অন্য শহরে উড়ে গেল বিমান। এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলে বসে তা নিয়ন্ত্রণ করে গেলেন অফিসারেরা। প্রায় শুয়ে-বসেই দিন কাটল তাঁদের। গোটা দশেক পণ্যবাহী বিমানকে শুধু রাস্তা দেখিয়ে নামাতে হয়েছে। আর সেগুলি উড়ে যাওয়ার সময়ে কয়েক সেকেন্ড সাহায্য করতে হয়েছে মাত্র।
বিমান মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বুধবারও লকডাউনে উড়ান চলবে না। এ ছাড়া, অন্য যে সব দিন রাজ্য সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করবে, সেই দিনগুলিতেও কলকাতা থেকে যাত্রী-উড়ান বন্ধ থাকবে।
এ দিন বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢোকার প্রতিটি গেট ছিল বন্ধ। এলাকাও ছিল ফাঁকা। টার্মিনালের বাইরে শেডের নীচে লটবহর নিয়ে পড়ে ছিলেন ভিন্ রাজ্যের কিছু শ্রমিক। যাঁরা শুক্রবার রাতে অথবা শনিবার কাকভোরে কলকাতায় এসেছিলেন এখান থেকে অন্য শহরে যাবেন বলে।
দিল্লি থেকে এ দিনই কলকাতায় ফেরার কথা ছিল অমিতাভ সেনগুপ্তের। দিল্লি থেকে সরাসরি উড়ান বন্ধ। তাই স্ত্রীকে নিয়ে গুয়াহাটি ঘুরে শহরে আসার টিকিট কেটেছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, “আমরা তো বিমানবন্দরে নেমে নিজেদের গাড়ির ব্যবস্থা করে বাড়ি যেতাম। তাতেও কেন আপত্তি? শনিবার সারা দিন শহরে একটাও গাড়ি চলেনি, এমনও তো নয়।”
আমদাবাদ থেকে বাবা-মাকে নিয়ে ফেরার কথা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার রাজদীপ গুহের। সেখান থেকেও কলকাতার সরাসরি উড়ান বন্ধ। জয়পুর হয়ে ফেরার টিকিট ছিল তাঁর। বৃহস্পতিবারের লকডাউনে উড়ান পরিষেবা সচল দেখে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবার জানতে পারেন, শনিবার উড়ান চলবে না। অগত্যা রবিবারের টিকিট কেটেছেন।
শিলচরের যুবক আব্দুল হোসেন বেঙ্গালুরুর এক লন্ড্রিতে কাজ করেন। লকডাউনে কাজকর্ম বন্ধ। তাই কলকাতা ঘুরে বাড়ি ফিরছিলেন। সঙ্গে আরও চার বন্ধু। শুক্রবার রাতে উড়ানে কলকাতায় নামার আগে ঘুণাক্ষরেও জানতেন না শনিবার উড়ান বন্ধ। রাতে জানতে পেরে রবিবার সকালের শিলচরের টিকিট কাটেন। আব্দুল বলেন, “সঙ্গে টাকাকড়ি বেশি নেই। হোটেলে থাকা সম্ভব নয়।” তাই শুক্রবার রাত থেকে রয়ে গিয়েছেন বিমানবন্দরের সামনে। বাসস্ট্যান্ডের সামনে একটি হোটেলে খাচ্ছেন।
বিহারের বাসিন্দা মহম্মদ তনখিরের এ দিন বিকেলে বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা ছিল। লকডাউনের কথা জানতে পেরে বাস ধরে সকালেই পৌঁছে যান বিমানবন্দরে। তাঁকে রাত কাটাতে হয়েছে বিমানবন্দরে। উড়ান বাতিল। টিকিট পেয়েছেন রবিবার সকালের।
এমন আরও কিছু যাত্রীর এ দিনের ঠিকানা ছিল কলকাতা বিমানবন্দর। বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “শনিবার সব মিলিয়ে ৯০টি উড়ান বাতিল হয়েছে। প্রায় ন’হাজার যাত্রীর যাতায়াত করার কথা ছিল। রবিবার থেকে উড়ান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। তবে পরের বুধবার আবার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে যাত্রী-উড়ান।’’