বর্ষবরণের রাতে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো ঠেকাতে গত কয়েক বছর ধরেই বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে বিধাননগর পুলিশ। কড়া নজরদারির পাশাপাশি অভিযুক্ত চালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পুলিশেরই একটি সূত্র বলছে, এর পরেও সচেতনতা ফেরা তো দূর, নিয়ম ভাঙাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে এক শ্রেণির চালকের কাছে। যা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে পুলিশের দেওয়া ‘কেস’-এর সংখ্যায়। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। যা দেখে বাসিন্দাদের প্রশ্ন, কড়া পদক্ষেপ বলতে তো লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা বা জরিমানা আদায় করা। কিন্তু তাতে আখেরে কাজের কাজ হচ্ছে কি?
বিধাননগর পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৭-র জানুয়ারি মাসে মত্ত চালকদের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রুজু করা হয়েছিল ২০১৮-র জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২-তে। ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের পরিসংখ্যানেও ফারাক খুব বেশি নেই। কিন্তু জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ। পুজোর মরসুমে অর্থাৎ অক্টোবরে সেই সংখ্যা বেড়েছে আরও বেশি। গত বছরে মোট ১৬৭০টি মামলা রুজু করা হয়েছিল। সেখানে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্তই রুজু হয়েছে ২৮৩১টি মামলা।
এই পরিসংখ্যান দেখে বিস্মিত পুলিশকর্তাদের অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, মোটরযান আইনের ১৮৫ নম্বর ধারা অনুসারে মত্ত চালকদের দু’হাজার টাকা জরিমানা কিংবা তিন মাসের জন্য লাইসেন্স সাসপেন্ড হতে পারে। কিন্তু সেই ধারা জামিন-যোগ্য হওয়ায় আইন মোতাবেক পদক্ষেপ করেও হুঁশ ফেরানো যাচ্ছে না চালকদের একাংশের। দু’বছরের হিসেব থেকেই সেটা স্পষ্ট। স্থানীয়দেরও অভিযোগ, যে ভাবে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকেরা তাতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
এই প্রেক্ষিতে পুলিশের দাবি, মত্ত অবস্থায় এবং অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো রুখতে বিধাননগরের বিশেষ কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত করে গার্ডরেল বসানো হচ্ছে। নাকা তল্লাশির পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে নজরদারি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ব্রেথ অ্যানালাইজার দিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আটক করা হচ্ছে গাড়িও।
বাসিন্দারা আরও বলছেন, সাজার পরিমাণ বাড়ালে হয়তো বেপরোয়া গাড়ি চালানোয় খানিকটা রাশ টানা যাবে। একই মত পোষণ করেছেন পুলিশের একাংশ। বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, আইন মোতাবেক যা করার পুলিশ করছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাতে পর্যাপ্ত সা়ড়া মেলেনি। তাই নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি গার্ডরেল বসিয়ে, আচমকা গাড়ি পরীক্ষার মাধ্যমে দুর্ঘটনা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও যদি দেখা যায় কোনও নাবালক মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে গাড়ি আটক করে তার অভিভাবকদের ডেকে পাঠানো হচ্ছে।