রাজ্যে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সিদের জন্য হাম-রুবেলার প্রতিষেধক প্রদান কর্মসূচি শুরু হয়েছিল গত ৯ জানুয়ারি। ফাইল ছবি।
পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজ, শনিবার রাজ্যে হাম-রুবেলার অতিরিক্ত প্রতিষেধক প্রদান কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের পর্যবেক্ষণ, এই কর্মসূচি ১০০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়নি। বরং, গোটা রাজ্যে প্রতিষেধক প্রদানের হার ৯০ শতাংশের কিছু বেশি। অন্য দিকে, কলকাতা-সহ আরও তিন পুর এলাকা এবং দুই জেলায় এই হার ৮০ শতাংশেরকম। তাই এ দিন স্বাস্থ্য ভবন এক নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, ওই পাঁচটি জায়গায় এই কর্মসূচি ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হল।
পাঁচটি জায়গার মধ্যে সব চেয়ে খারাপ অবস্থা কলকাতা পুরসভা এলাকার। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত শহরে প্রতিষেধক প্রদানের হার ৬৬ শতাংশ। এ দিন স্বাস্থ্যসচিবের জারি করা ওই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, কলকাতার পাশাপাশি হাওড়া, শিলিগুড়ি, আসানসোল পুরসভা এলাকায় এবং উত্তর ২৪ পরগনার শহরাঞ্চল ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় প্রতিষেধক দেওয়ার হার সন্তোষজনক নয়।
রাজ্যে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সিদের জন্য হাম-রুবেলার প্রতিষেধক প্রদান কর্মসূচি শুরু হয়েছিল গত ৯ জানুয়ারি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২ কোটি ৩২ লক্ষ ৮৩ হাজার ৯৯৯ জনের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত প্রতিষেধক নিয়েছে ২ কোটি ৯ লক্ষ জন।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কর্মসূচি শুরুর প্রথম সপ্তাহেই লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩৩ শতাংশের প্রতিষেধক দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। ফলে মনে করা হয়েছিল, ১০০ শতাংশ প্রতিষেধক প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সমস্যা হবে না। কিন্তু আচমকাই বিভিন্ন ছুটি ও অন্যান্য কারণে সেই গতি কমে যায়।’’ তবে চার পুর এলাকায় এই হার কম হওয়ার নেপথ্যে বেসরকারি স্কুলের একাংশের অনীহাকে দায়ী করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে স্কুলে আয়োজিত শিবিরে প্রতিষেধক পাওয়ার কথা ১ কোটি ৭৮ লক্ষ ৬৮ হাজার ৩৫৫ জনের। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্কুল থেকে প্রতিষেধক পেয়েছে ১ কোটি ৪৪ লক্ষ ২৫ হাজার ১০৩ জন।
খাস কলকাতায় প্রতিষেধক প্রদানের হার এখনও ৭০ শতাংশের নীচে কেন?
কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিকের দাবি, ‘‘মূল সমস্যা বেসরকারি স্কুল নিয়ে। ৬৭টি স্কুলে ওই কর্মসূচিই হয়নি। আর যেগুলিতে হয়েছে, সেখানেও অনেকেই প্রতিষেধক নেয়নি। বহু বার বলা সত্ত্বেও সচেতনতা বাড়ছে না।’’
অনেকটা একই অবস্থা শিলিগুড়ি পুর এলাকার। সেখানকার ৪১টি স্কুলে প্রতিষেধক প্রদানের হার নগণ্য। কোথাও ১২ শতাংশ, কোথাও আবার ২০ শতাংশ। পরিস্থিতি আঁচ করে সম্প্রতি স্কুলগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেছেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মতে, খড়িবাড়ির বাতাসির একটি স্কুলে প্রতিষেধক নেওয়ার পরে এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। প্রতিষেধকের কারণে মৃত্যু না হলেও, সেই খবর রটে যাওয়ায় কর্মসূচি ধাক্কা খেয়েছে।
পিছিয়ে রয়েছে আসানসোল পুর এলাকাও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শেখ মহম্মদইউনুস বলেন, “বেশির ভাগ গ্রহীতাই স্কুল থেকে প্রতিষেধক নিচ্ছে। তাই পড়ুয়াদের উপস্থিতির উপরে এই হার নির্ভর করছে।” স্কুল কর্তৃপক্ষদের দাবি, অহেতুক ভয়ের কারণেপড়ুয়াদের একাংশ প্রতিষেধক নিতে চায়নি। অভিভাবকদেরওবার বার বোঝানো হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।