‘তা হলে পেঁয়াজ না খেয়ে আপেল খেলেই তো হয়!’

কোথাও আবার নিজে থেকেই দু’টাকা বেশি দেবেন বলে কেউ কেউ একটু বেশি পেঁয়াজ চাইছেন। কিন্তু দোকানদারেরা জানিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের হাত-পা বাঁধা।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৫২
Share:

মহার্ঘ: ডেকার্স লেনে স্যালাডে দেখা মিলছে না পেঁয়াজের (বাঁ দিকে)। পেঁয়াজির দাম বাড়িয়েছেন অনেক বিক্রেতাই (ডান দিকে)। সোমবার, চাঁদনি চকের একটি দোকানে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ঘুগনির উপরে লঙ্কা কুচি আর কয়েকটি শশার টুকরোর সঙ্গে সুতোর মতো এক টুকরো পেঁয়াজ। সোমবার থেকে শহরের বিভিন্ন খাবারের দোকানে স্যালাডে এ ভাবেই নিজের অস্তিত্ব বাঁচানোর তুমুল চেষ্টা সদ্য সেঞ্চুরি হাঁকানো পেঁয়াজের।

Advertisement

যা দেখে কোথাও মুচকি হাসছেন ক্রেতা। কোথাও আবার নিজে থেকেই দু’টাকা বেশি দেবেন বলে কেউ কেউ একটু বেশি পেঁয়াজ চাইছেন। কিন্তু দোকানদারেরা জানিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের হাত-পা বাঁধা। দু’টাকা কেন, পাঁচ টাকা বেশি দিলেও পেঁয়াজ দেওয়ার ক্ষমতা নেই। কারণ একশো ছোঁয়ার পরেই পেঁয়াজ কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন দোকানদার। বেশি দেবেন কোথা থেকে?

ঘুগনির দোকানদারের থেকেও অবশ্য বেশি সমস্যায় পড়েছেন তেলেভাজার দোকানিরা। ১০০ টাকা দিয়ে পেঁয়াজ কিনে, পেঁয়াজি বানিয়ে বিক্রি করতে গেলে দাম তো বাড়াতে হবে। কিন্তু হঠাৎ দাম বাড়ালে যদি ক্রেতা কমে যায়! তাই কেউ কেউ ‘তাপ্পি’ মারার মতো পেঁয়াজের সঙ্গে মেশাচ্ছেন বাঁধাকপি।

Advertisement

শহরের অনামী দোকানগুলি বাঁধাকপি মেশালেও নামী তেলেভাজার দোকানদারেরা গুণগত মানের সঙ্গে আপস করতে রাজি নন। উত্তর কলকাতার বিধান সরণিতে এমনই এক তেলেভাজার দোকানের মালিক কৃষ্ণপ্রতাপ গুপ্ত সোমবার জানালেন, আপাতত তিনি দাম বাড়াননি ঠিকই। তবে রবিবার পর্যন্ত যেখানে দু’বস্তা পেঁয়াজ কিনতেন পেঁয়াজি তৈরির জন্য, এ দিন থেকেই তা এক বস্তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও অন্য ভাজাভুজির পরিমাণ রয়েছে আগের মতোই। তবে কৃষ্ণবাবু এ-ও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী মাসের গোড়াতেও যদি দাম না কমে তা হলে এক টাকা করে পেঁয়াজির দাম বাড়াতে বাধ্য হবেন। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশন লাগোয়া এক তেলেভাজার দোকানের মালিক আবার গুণগত মান ধরে রাখতে সোমবার থেকেই পেঁয়াজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন দু’টাকা!

তবে শুধু পেঁয়াজির জন্য নয়। খাবারের পাতে পেঁয়াজের চাহিদা বরাবরই বেশি। বিশেষত ভাত-রুটির সঙ্গে পেঁয়াজের টুকরো বা লঙ্কা খাওয়ার চাহিদা থাকলেও এ দিন থেকেই কলকাতার অফিসপাড়ার দোকানগুলিতে কাঁচা পেঁয়াজ দেওয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিছু কিছু পদে পেঁয়াজ বাদ দিলে নেহাত স্বাদ খারাপ হবে। তাই সে সব ক্ষেত্রে আপস করতে না পারলেও কাঁচা পেঁয়াজ কোনও মতেই দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানালেন ডেকার্স লেনের একটি খাবার হোটেলের ম্যানেজার শ্যামল রায়।

শুধু কি তেলেভাজার দোকান আর খাবার হোটেল? ছোট্ট একটি বলের মতো দেখতে এই আনাজের সেঞ্চুরি হাঁকানো রীতিমতো আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে পাড়ার আড্ডায়, মায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। গত কয়েক দিন ধরে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সেখানে লোকজন মিম বানাতেও শুরু করে দিয়েছেন! যেমন, পেঁয়াজের ছবি দিয়ে কেউ লিখেছেন —‘সব সেঞ্চুরি আনন্দের হয় না, কিছু দুঃখেরও হয়।’ আবার কেউ কেউ বলছেন, ‘আরে আপেলের দামও তো একশো ছুঁয়েছে। তা হলে পেঁয়াজ না খেয়ে আপেল খেলেই তো হয়! পুষ্টিও হবে বেশি!’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement