দায়সারা: আর জি কর হাসপাতালের প্রবেশপথের গায়ে কোনও রকমে সেঁটে দেওয়া হয়েছে ‘নো হর্ন’ লেখা সতর্কবার্তা (চিহ্নিত)। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
কখনও কখনও শব্দদূষণ রাতে নির্ধারিত মাত্রার থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এক দিন বা দু’দিন নয়। টানা গত কয়েক বছর ধরে এমনই অবস্থা। তা-ও শিল্প বা বাণিজ্যিক অঞ্চলে নয়, ‘সাইলেন্স জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত শহরের একাধিক হাসপাতাল সংলগ্ন অঞ্চলেই। শহরের বিভিন্ন জায়গায় শব্দমাত্রা কত, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যা বিশ্লেষণ করে এমনই তথ্য উঠে আসছে।
এমনিতে শহরের ‘সাইলেন্স জ়োন’-এ শব্দদূষণের সমস্যা নতুন নয়। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক রিপোর্ট (২০১৮) জানাচ্ছে, যতই শব্দদূষণ নিয়ে সরব হন না পরিবেশকর্মীরা, সেই অবস্থা বিন্দুমাত্র পাল্টায়নি। অবশ্য ২০১৫ সাল থেকে প্রকাশিত পরপর চার বছরের (২০১৫-’১৮) রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, শহরের সাইলেন্স জ়োন হিসেবে ঘোষিত হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা কী বিপজ্জনক মাত্রায় শব্দ-উপদ্রুত। অথচ ২০ বছর আগে, অর্থাৎ ২০০০ সালে এই রাজ্যকেই ‘মডেল’ করে সারা দেশের কেন্দ্রীয় শব্দ আইন তৈরি হয়েছিল। এখন সেখানে শহরের শব্দদূষণ যে মাত্রায় পৌঁছেছে তা শুধু উদ্বেগেরই নয়, লজ্জারও বলে মনে করছেন চিকিৎসক এবং পরিবেশকর্মীদের অনেকেই।
পর্ষদের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং এসএসকেএম হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় ধারাবাহিক ভাবে শব্দবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে। ওই সব এলাকায় দিন ও রাতে শব্দের নির্ধারিত মাত্রা যথাক্রমে ৫০ এবং ৪০ ডেসিবেল হওয়ার কথা। কিন্তু চার বছরের রিপোর্ট দেখাচ্ছে, এসএসকেএম হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় কোনও কোনও মাসে দিনে ও রাতে সে মাত্রা গড়ে ৭১-৮১ ডেসিবেলের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। আবার আর জি কর হাসপাতালে কোনও কোনও মাসে দিনে গড়ে ৬৫ ডেসিবেল এবং রাতে তা ৬০ ডেসিবেলের মধ্যে থেকেছে।
হর্ন না বাজানোর সাইনবোর্ড প্রায় ঢাকা পড়েছে গাছে। রবিবার, এসএসকেএম হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী
যা নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকদের একটি অংশ। আর জি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল জানাচ্ছেন, এমনিতেই শহরে শব্দের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে মানুষের সমস্যা হচ্ছে। তার উপরে হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় শব্দদূষণে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা হাসপাতালের মধ্যে শব্দবিধির যাবতীয় নিয়ম মানছি। কিন্তু রাস্তা তো আমাদের হাতে নেই। এমনিতেই টালা সেতু বন্ধ হওয়ায় হাসপাতালের সামনের রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান যানজট এবং শব্দদূষণ আটকাতে আলোচনাও করেছি। কিন্তু পথ পাচ্ছি না।’’ একই কথা আর জি কর হাসপাতালের ইএনটি চিকিৎসক ইন্দ্রনাথ কুণ্ডুর। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে শব্দবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু বাইরেটা আমাদের হাতে নেই। বাচ্চা, বয়স্ক বা মাঝবয়সিদের কানে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই।’’
এসএসকেএম হাসপাতালের ইএনটি চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ধারাবাহিক ভাবে কানের কাছে যদি ৭০-৮০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ হয়, তা হলে কানে সমস্যা হতে বাধ্য। বিশেষ করে হাসপাতাল-সহ সাইলেন্স জ়োনগুলিতে যদি শব্দবিধি না মানা হয়, সেখানে ‘নয়েজ় ইনডিউসড হিয়ারিং লস’-এর (অতিরিক্ত শব্দে শ্রবণ-সমস্যা) ঘটনা বাড়বেই। আর সেটাই হচ্ছে।’’ যদিও এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রিপোর্টে কী আছে, জানি না। শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সার্বিক ভাবে যা হওয়ার সেটা সব জায়গাতেই হচ্ছে। তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা ওয়ার্ডের বদ্ধ জায়গার মধ্যে থাকেন, তাই সেখানে বা অফিসে আলাদা করে বুঝতে পারি না।’’