বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন ওই পুলিশ অফিসার।— নিজস্ব চিত্র
ডান পায়ের পাতায় বাঁধা ব্যান্ডেজ থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। পচে গিয়েছে পায়ের ঘা। সেই পা ধরে রাস্তায় বসে যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। পথচলতি মানুষজন দৃশ্যটি দেখছেন। কিন্তু কেউই সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন না।
রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ থানা থেকে এক আসামিকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে এনেছিলেন এক পুলিশ অফিসার। পরীক্ষা শেষে বেরিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পরেই তিনি ওই দৃশ্য দেখে নেমে পড়েন। এর পরে হাসপাতাল থেকেই হুইলচেয়ার এনে ওই বৃদ্ধকে তাতে বসিয়ে, নিজেই সেটি চালিয়ে নিয়ে গিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাতেই চিকিৎসা শুরু হয় ওই বৃদ্ধের।
মঙ্গলবার পুলিশের এমনই মানবিক মুখ দেখল হাওড়া। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন বিকেলে পায়ের চিকিৎসার জন্য জগদীশপুরের বাড়ি থেকে একাই হাওড়া জেলা হাসপাতালে আসেন খোকন ধাড়া নামে ওই বৃদ্ধ। কিন্তু অভিযোগ, পা থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে থাকায় তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন খোকনবাবু হাসপাতালের সামনে বসে কান্নাকাটি শুরু করেন। এক স্থানীয় দোকানদার বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধ সকলের কাছে হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করছিলেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি।’’
অভিযোগ, বিকেল ৪টে থেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও কেউ সাহায্য না করায় ওই বৃদ্ধ কোনও রকমে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে জেলাশাসকের বাংলো আর হাসপাতালের মধ্যে নিউ কালেক্টরেট অফিসের পাশে ফুটপাতে বসে পড়েন। যন্ত্রণায় মাঝেমধ্যেই চিৎকার করে কান্নাকাটিও করতে থাকেন।
রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ঋষি বঙ্কিম রোড ধরে থানায় ফিরছিলেন গোলাবাড়ি থানার সাব-ইনস্পেক্টর হেমন্ত ঘড়াই। অত রাতে প্রায় ফাঁকা রাস্তার ধারে বসে কে চিৎকার করছেন দেখতে গিয়ে দৃশ্যটি তাঁর চোখে পড়ে। আর দেরি করেননি হেমন্তবাবু। হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে নিজেই হুইলচেয়ার এনে ওই বৃদ্ধকে বসিয়ে নিয়ে যান জরুরি বিভাগে। সেখানে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
বুধবার হেমন্তবাবু বলেন, ‘‘রাতে ফুটপাতে বসে যন্ত্রণায় কাঁদছিলেন বৃদ্ধ মানুষটি। বলছিলেন, হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি। তা শুনে আমিই হাসপাতাল থেকে হুইলচেয়ার এনে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ওঁকে ভর্তির ব্যবস্থা করি।’’
কিন্তু হাসপাতাল ওই বৃদ্ধকে ফিরিয়ে দিল কেন? হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে সকলকে ভর্তি নেওয়া হয়। কাউকে ফেরানো হয় না। তবে এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল, খোঁজ নিতে হবে। যদি সত্যিই এমন হয়ে থাকে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’