— ছবি সংগৃহীত
ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি মিলিয়ে কলকাতা পুলিশের ৭৯টি পদে রদবদলের ঘোষণা হয়েছিল প্রায় ৭৯ দিন আগে। নিজ নিজ দায়িত্ব নিয়ে সকলে বদলি হলেও রবিবার রাত পর্যন্ত কালীঘাট থানার ওসির বদল হয়নি বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তিনি যথারীতি বসছেন আগের চেয়ারেই। এর জেরে আটকে গিয়েছে রবীন্দ্র সরোবর থানার ওসি-র বদলিও। কারণ, ওই থানা থেকেই নতুন ওসি-র যাওয়ার কথা ছিল কালীঘাট থানায়।
কিন্তু আড়াই মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও কী কারণে এই রদবদল আটকে রয়েছে, তার কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের কাছে। কলকাতা পুলিশের নবনিযুক্ত কমিশনার সৌমেন মিত্র বলেন, ‘‘নতুন এসেছি। এ ব্যাপারে ঠিক বলতে পারব না। যুগ্ম কমিশনার (সদর) এ ব্যাপারে বলতে পারবেন।’’ যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘ওসি পদে বদলির নির্দেশিকায় কোনও পরিবর্তন করা হয়নি।’’
গত ২৭ নভেম্বর কলকাতা পুলিশের ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি পদে রদবদলের নির্দেশিকা জারি হয় লালবাজার থেকে। তৎকালীন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার ওই নির্দেশিকা-পত্রে লেখা ছিল, ‘এই নির্দেশিকা অবিলম্বে কার্যকর হবে।’ সাধারণত, এমন নির্দেশিকা জারি হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে নতুন দায়িত্ব বুঝে নেন বাহিনীর সদস্যেরা। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। একমাত্র উলটপুরাণ কালীঘাট থানার ক্ষেত্রে। প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের ওই নির্দেশিকা-পত্রের ২৯ নম্বরে লেখা ছিল, কালীঘাট থানার ওসি শান্তনু সিংহ বিশ্বাসকে পাঠানো হচ্ছে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চে। সেই জায়গায় কালীঘাট থানার ওসি হিসেবে আসছেন রবীন্দ্র সরোবর থানার ওসি জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়। কালীঘাট থানারই অতিরিক্ত ওসি সত্যজিৎ কর্মকারের যাওয়ার কথা ছিল রবীন্দ্র সরোবরের ওসি পদে। কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই এখন থমকে আছে। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘শান্তনুবাবু সরছেন না কেন, জানি না। তবে দ্রুত সরে যাবেন শুনেছি।’’
প্রসঙ্গত, ইনস্পেক্টর পদের অফিসার শান্তনুবাবু রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলের ‘আস্থাভাজন’ হিসেবেই পুলিশ মহলে পরিচিত। রাজ্য পুলিশ কল্যাণ পর্ষদের নোডাল অফিসার হিসেবেও তাঁকেই নিয়োগ করা হয়েছে সম্প্রতি। স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের কমিটির মধ্যে সমন্বয় সাধন করবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, পুলিশ বাহিনীতে বঞ্চনা ও নানা অভিযোগের চোরাস্রোত দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। করোনা আবহে কলকাতার পুলিশ ট্রেনিং স্কুল এবং সল্টলেকে সশস্ত্র বাহিনীর অফিসে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে। পরিস্থিতি বুঝে ঘটনাস্থলে যেতে হয় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকেও। অনেকেই মনে করছেন, ভোটের আগে বাহিনীর অভাব-অভিযোগ যাতে বিক্ষোভের চেহারা না নেয়, তাই ওই পর্ষদের গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকারের ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে পরিচিত এক অফিসারকেই নিয়োগ করা হয়েছে।
পুলিশ মহলে প্রশ্ন, ভোটের কথা ভেবে যেখানে ৭৯টি ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি পদে রদবদলের ঘোষণা করা হয় প্রায় আড়াই মাস আগে, সেখানে ‘আস্থাভাজন’ হওয়াতেই কি কালীঘাট থানার চেয়ার ছাড়তে হয় না শান্তনুবাবুকে? ওই অফিসার বলেন, ‘‘এর উত্তর তো আমি দিতে পারব না। পুলিশ কমিশনার বলতে পারবেন।’’ স্পষ্ট উত্তর যদিও পুলিশের কোনও শীর্ষ কর্তার কাছেই মেলেনি।