এক ফাঁকে চায়ে গলা ভেজানো ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষের। নিজস্ব চিত্র।
পুরভোট প্রচারের শুরুর পর্বে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিলেও শেষ ধাপে এসে খানিকটা গতি বাড়ালেন সব দলের প্রার্থীরাই। ভোটারদের কাছে পৌঁছে যেতে কেউ চেপে বসলেন হুডখোলা জিপে, কেউ বর্ণাঢ্য মিছিল করে এগোলেন। কেউ আবার আবাসনে ঢুকে আড্ডার মেজাজে বা বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার সারলেন। তবে একটা বিষয়ে দেখা গেল, প্রায় সকলেই সমান। তা হল, কোভিড-বিধি জলাঞ্জলি দেওয়ার প্রতিযোগিতা।
আগামী ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। এ দিনই ছিল প্রচারের শেষ রবিবার। দিনভর জোরদার প্রচার সারল ডান, বাম-সহ সব দল। সকাল থেকেই দলীয় কর্মী এবং সমর্থকদের নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েন শাসকদলের প্রার্থীরা। উল্টোডাঙা এলাকায় দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করতে দেখা যায় মন্ত্রী তথা পুরভোটের আর এক প্রার্থী ফিরহাদ হাকিমকে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অনিন্দ্যকিশোর রাউতকে সঙ্গে নিয়ে হুডখোলা গাড়িতে প্রচার সারেন তিনি। মানুষের উদ্দেশে হাত নেড়ে, প্রণাম জানিয়ে আবেদন করতে দেখা যায় তাঁকে। সকালেই একাধিক ওয়ার্ডে প্রচার সেরে নেন বিধায়ক তথা পুরপ্রার্থী দেবাশিস কুমার। বিকেলে ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে হুডখোলা জিপে চড়ে প্রচার করেন তিনি ও জাভেদ খান। বিকেলে ফের নিজের ওয়ার্ডেও প্রচারের ফাঁকে আত্মবিশ্বাসী দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘কলকাতার উন্নয়নে গত কয়েক বছরের খতিয়ানকে সামনে রেখেই ভোট চাইতে যাচ্ছি। মনে হয় না বিরোধীরা ডবল ডিজিট পার করতে পারবেন।’’ ঠিক তখনই যুব তৃণমূলের নেত্রী সায়নী ঘোষকে নিয়ে প্রচারে হাঁটছেন পাটুলি এলাকার আর এক আত্মবিশ্বাসী প্রার্থী বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত। ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সুশান্তকুমার ঘোষ অবশ্য আনন্দপুরের এক আবাসনে আড্ডার মেজাজে প্রচার সারেন।
পিছিয়ে ছিলেন না বাম,কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থীরাও। সকালে যাদবপুর এলাকায় ৯৫ ও ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে হাঁটেন বাম নেতৃত্ব। যাদবপুর, বিজয়গড়, পল্লিশ্রী এলাকা দিয়ে যাওয়া ওই মিছিলে ছিলেন সুজন চক্রবর্তী, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও বাদশা মৈত্র। তাঁরা বলেন, ‘‘মানুষ স্বাধীন ভাবে ভোট দিতে পারলেই তৃণমূল, বিজেপি উত্তর পাবে। ওঁরা ভয় পেয়েছেন বলেই সব জায়গায় ভয় দেখানো চলছে।’’ বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাম প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি প্রচার সারতেও দেখা যায়। বিকেলে ব্রহ্মপুরে মিছিল করার ফাঁকেই প্রার্থী চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মানুষ যদি ভোট দিতে পারেন, জয় নিশ্চিত।’’
১০১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের প্রচারে সায়নী ঘোষ।
দিনের শুরু থেকেই ৮৬ এবং ৮৭ নম্বরের কংগ্রেস প্রার্থীকে নিজেদের এলাকায় প্রচারে বেরোতে দেখা গেল। ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী শম্পা ঘোষ যোধপুর এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচারে ব্যস্ত থাকলেন। টালিগঞ্জে নিজেই ঘুরে প্রচার সারেন ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী কার্তিক দাস।
সকালে বাড়ির দরজায়, বিকেলে শোভাযাত্রায়। এ ভাবেই মানুষের কাছে পৌঁছে প্রচার সারেন বিজেপি প্রার্থীরা। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মীনাদেবী পুরোহিতের সমর্থনে দেখা গেল বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। প্রার্থীকে নিয়ে পোস্তার বিভিন্ন এলাকায় প্রচার সারেন তিনি। প্রচারে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীর সমর্থনে দেখা গেল সুকান্ত ও শুভেন্দুকে। তবে দলমত নির্বিশেষে সবাই একটি জায়গায় মিলে গিয়েছেন। তা হল করোনা-বিধি ভঙ্গের প্রতিষোগিতা। ১৯ তারিখের ভোটযন্ত্র তো ফলাফল জানাবেই। কিন্তু বিধি-ভঙ্গের ফলাফল? জানতে কত দিনের অপেক্ষা?