মেয়রের বক্তব্য, হকারদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অনেক নির্দেশ রয়েছে। ফাইল ছবি
শহরে হকারি করতে গেলে শৌখিন ছাতা নিয়ে বসতে হবে। যাতে শহরের সৌন্দর্যায়নের সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। যে কয়েকটি শর্তের পরিবর্তে হকারদের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে, তার মধ্যে শৌখিন ছাতার শর্ত হল অন্যতম। এমনটাই জানাচ্ছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
ফিরহাদ বলছেন, ‘‘সংখ্যাগরিষ্ঠ হকারই কালো প্লাস্টিক ব্যবহার করেন। তাতে শহরের সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি প্লাস্টিকে আগুন লেগে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু ফ্যান্সি ছাতা নিয়ে বসলে শহরের সৌন্দর্যহানি হয় না। ফলে লাইসেন্স পেতে হলে ফ্যান্সি ছাতা নিয়ে বসতে হবে, এটা অন্যতম শর্ত।’’ হকারদের রেজিস্ট্রেশন প্রসঙ্গে আরও কয়েকটি কথা বলেছেন মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী। তিনি জানাচ্ছেন, শহরে ‘হকিং জ়োন’-এও যেমন তেমন ভাবে, কালো প্লাস্টিক নিয়ে, নোংরা করে হকারি করা চলবে না। নিজের স্টলকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। মেয়রের কথায়, ‘‘ফুটপাতের এক তৃতীয়াংশের বেশি জায়গা জুড়ে বসা যাবে না। রাস্তার উপরে তো কোনও ভাবেই বসে হকারি করা চলবে না।’’
প্রসঙ্গত, দিন বারো আগেই শহরের হকার পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘পুরো ফুটপাতটাই যদি দখল হয়ে যায়, হাঁটব কী ভাবে?’’ আরও বলেছিলেন, ‘‘এই কারণেই হকারদের কার্ড দিতে বলেছিলাম। অনেক দিন হল, এ বার কিছু করতে হবে।’’ পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরেই হকারদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়। এর আগে ২০১৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী হকারদের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় সে সময়ে প্রক্রিয়াটি এগিয়েছিল। সে সময়ে হকারদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছিল পুলিশ। নতুন ভাবে রেজিস্ট্রেশন শুরুর আগে সেই তথ্যভান্ডারের সাহায্য নেওয়া হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। সাত বছর আগে ৬০ হাজারেরও বেশি হকারের আবেদনপত্র জমা পড়েছিল পুরসভায়। কিন্তু হকার চিহ্নিতকরণ-সহ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে টাউন ভেন্ডিং কমিটি গঠন করে শহরে ‘হকিং জ়োন’, ‘নন-হকিং জ়োন’ নির্দিষ্ট না করার অভিযোগ তোলে হকার সংগঠনগুলি। ফলে সেই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়নি।
সেই প্রসঙ্গে মেয়রের বক্তব্য, হকারদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অনেক নির্দেশ রয়েছে। সরকার কিছু করতে গেলেই হকার সংগঠনগুলি সেই সব নির্দেশের প্রসঙ্গ টেনে আনে। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটা সেখানে থমকে যায়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই কেন প্রশাসন পদক্ষেপ করে না, যাতে হকার সংগঠনগুলির তরফে কোনও কিছু বলার না থাকে? এ প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলছেন, ‘‘এ বার সব দিক দেখেই মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার প্রয়োজন হলে কড়া পদক্ষেপ করবে। কারণ, হকারদেরও এটা মনে রাখতে হবে যে, তাঁদের হকারির অধিকার যেমন রয়েছে, তেমনই শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধা করে দেওয়ার দায়িত্বও তাঁদেরই।’’