নির্মল মাজি।
কলকাতা মে়ডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান। মঞ্চে বসে তাবড় চিকিৎসকেরা। দর্শকাসনে সামনের সারিতে স্বাস্থ্যকর্তা এবং পদস্থ আমলারা। বক্তা বলে চলেছেন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও! কয়েক মিনিটের স্তব্ধতা। তার পরেই হাসির রোল উঠল প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ‘শুধরে’ নিয়ে বক্তা বললেন, থুড়ি, ডিরোজিও নয়। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড হেয়ার! ঘটনাচক্রে ওই ব্যক্তি পেশায় চিকিৎসক, হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান এবং সেখানকারই প্রাক্তনী! তাঁর মুখে এ ভাবেই বদলে গেল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইতিহাস।
সোমবারের ওই অনুষ্ঠানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ঐতিহ্য প্রসঙ্গে বক্তৃতায় একাধিক ভ্রান্ত তথ্য তুলে ধরলেন নির্মল মাজি। ইতিহাস বলছে, ১৮৩৫ সালের ২৮ জানুয়ারি জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্কের সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হয়। প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন ফোর্ড জোসেফ ব্র্যামলি। যদিও এ সব কোনও তথ্যই নির্মলবাবুর বক্তৃতায় উঠে আসেনি। তিনি বলেন, ‘‘এশিয়ার প্রথম মেডিক্যাল কলেজ অর্থাৎ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ডিরোজিও।’’ পরমুহূর্তেই বিষয়টি সামলে নিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ডিরোজিও নন, প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ডেভিড হেয়ার।’’
দর্শকাসনে প্রথম সারিতে বসে থাকা স্বাস্থ্যকর্তা ও আমলারা তখন মুখ টিপে হাসছেন। যদিও পরে নির্মলবাবু বলেন, ‘‘ডেভিড হেয়ার কিংবা ডিরোজিওর মতো ব্যক্তিত্বেরা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এটাই বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম।’’ যা শুনে এক স্বাস্থ্যকর্তার টিপ্পনী, ‘‘ডিরোজিও মারা যাওয়ার চার বছর পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। উনি কেন এমন কথা বললেন, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।’’
হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা দিবস এবং পুনর্মিলন উৎসবের বিতর্ক অবশ্য এখানেই শেষ হয়নি। কলেজের প্রাক্তনী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন ঘিরেও দিনভর চলে টানাপড়েন। প্রাক্তনী সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি প্রাক্তনী সমিতির যাবতীয় কাজের বাস্তবায়ন করে। আগামী বছরের কমিটির সদস্য নির্বাচন এ দিন চূড়ান্ত হয়। ২৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এই নির্বাচনেও মন্ত্রী নির্মল মাজি এবং তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঘিরে দেখা দেয় জটিলতা।
চিকিৎসক শান্তনু সেন ঘনিষ্ঠ, মেডিক্যাল কলেজের এক প্রাক্তনী বলেন, ‘‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্মলবাবু প্রাক্তনী সমিতির সভাপতি হয়েছেন। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ও প্রাক্তনী হয়েও বারবার তাঁর আচরণে হাসপাতাল এবং সংগঠন সমালোচনার মুখে পড়েছে। তাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।’’ আর এক প্রাক্তনীর কথায়, ‘‘নির্মলবাবুর ঘনিষ্ঠেরা বারবার ফোন করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। তবে, পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝে পেরে ওঁরা নিজেরাই সরে দাঁড়িয়েছেন।’’ এ দিন নির্মলবাবুর ঘনিষ্ঠ এক প্রাক্তন পড়ুয়া মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।
নির্মলবাবু এ প্রসঙ্গে অবশ্য বলেন, ‘‘কলেজের প্রাক্তনী হিসেবে গোলমাল চাই না। চিকিৎসকেরা কলেজের নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই করছেন, এটা অসম্মানজনক।’’