চলছে ধোঁয়া পরীক্ষা। — নিজস্ব চিত্র
পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী এক জনই। কিন্তু পরীক্ষক দু’জন। আর তাতেই বিপত্তি। প্রথম পরীক্ষকের কাছে সসম্মানে উতরে গেলেও পরের পরীক্ষায় ডাহা ফেল! এ বার পরীক্ষার্থী ফেল না পাশ— বিভ্রান্তি তা নিয়েই।
এখানে প্রার্থী গাড়ি। আর দুই পরীক্ষক যথাক্রমে শহরের ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্র ও খোদ পরিবহণ দফতর। বিভিন্ন গাড়ি নিয়মিত ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রে দূষণের মাত্রা পরীক্ষায় পাশ করছে। সেই একই গাড়ি ফেল করছে পরিবহণ দফতরের পরীক্ষায়। ফেল করায় জরিমানাও গুণতে হচ্ছে ৭৫০ টাকা।
কেন এমন হচ্ছে? পরিবহণ কর্তাদের বক্তব্য, ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অনেক সময়েই ঠিকঠাক দূষণ পরীক্ষা হচ্ছে না। গলদ থেকে যাচ্ছে দূষণের মাত্রা পরীক্ষাতেও। যার জেরেই এমন বিভ্রান্তি। এ বার তাই গাড়ির পাশাপাশি ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রেও সিসি ক্যামেরা-সহ নানা প্রক্রিয়ায় নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবহণ দফতর।
দফতর সূত্রে খবর, শহরে পুরনো ৯৫টি ও নতুন ১৬টি কেন্দ্র মিলিয়ে মোট ১১১টি ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। মূলত পেট্রোল পাম্পগুলি পরিবহণ দফতর ও পরিবেশ দফতরের থেকে ছাড়পত্র পেয়ে ওই কেন্দ্র চালায়। ছ’মাসে এক বার গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষা করাতে হয়। পাম্পগুলি যে যন্ত্রের সাহায্যে ধোঁয়া পরীক্ষা করে সেগুলি হল— ফোর গ্যাস অ্যানালাইজার (পেট্রোল চালিত গাড়ির জন্য) ও স্মোক ডেনসিটি মিটার (ডিজেল চালিত গাড়ির জন্য)। অন্য দিকে, রাস্তায় চলন্ত গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষার জন্য পরিবহণ দফতরের কাছে রয়েছে রিমোট সেন্সিং ডিভাইস (আরএসডি)। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, পেট্রোল পাম্পের পরীক্ষা কেন্দ্রে ধরা না পড়লেও দফতরের মেশিনে দেখা যাচ্ছে গাড়ির ধোঁয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোকার্বন নির্দিষ্ট পরিমাণের থেকে বেশি রয়েছে।
এক পরিবহণ কর্তা জানান, এর পিছনে কারণ মূলত তিনটি। প্রথমত, যে সমস্ত যন্ত্র দিয়ে ধোঁয়া পরীক্ষা করানো হয়, তা যথেষ্ট নয়। দ্বিতীয়ত, পাম্পে থাকা মেশিনের সঙ্গে একটি পাইপ লাগানো থাকে। মূলত গাড়ির সাইলেন্সর পাইপের ভিতরে মেশিনের পাইপের পুরো অংশ ঢুকিয়ে গাড়ি নিউট্রাল থাকা অবস্থায় সর্বোচ্চ পিকআপে তুলতে হয়। মেশিনের পাইপই আদতে সেন্সর। তার মাধ্যমেই ওই ধোঁয়াতে কোন উপাদান কত পরিমাণে রয়েছে, তার মাপ পাওয়া যায়। দেখা গিয়েছে, একটি গাড়ি বা মোটরবাইকের সাইলেন্সর পাইপের দৈর্ঘ্য বিভিন্ন রকমের হয়। অনেক গাড়িতে মেশিনের পাইপ পুরোটা যেতেই পারে না। ফলে বাইরের বাতাসে থাকা অক্সিজেন সেন্সরে ঢুকে গেলে পুরো পরীক্ষাটি বিফলে চলে যায়। তৃতীয়ত, ধোঁয়া পরীক্ষা হওয়ার পরে তাতে থাকা উপাদানের পরিমাণ পরিবর্তন করতে পারেন সেখানকার কর্মীরা। ফলে, তাঁরা অসাধু উপায় অবলম্বন করতে পারেন বলেও আশঙ্কা দফতরের।
এই পরিস্থিতিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা সঠিক ভাবে করতে তিনটি পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবহণ দফতর। এক, ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে নজরদারি চালানো হবে। দুই, সেন্সর থেকে কেন্দ্রের কম্পিউটারের পাশাপাশি পরীক্ষার ফল চলে যাবে পরিবহণ দফতরেও। ফলে, ইচ্ছে থাকলেও কেউ তা পরিবর্তন করতে পারবেন না। তৃতীয়ত, খড়্গপুর আইআইটি-র একটি বিশেষ দলকে ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির যন্ত্র পরীক্ষা করে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রগুলিতে কী যন্ত্র থাকবে, তার সিদ্ধান্ত নেবে দফতর।
কলকাতার অটো এমিশন টেস্টার অ্যাসোসিয়েশন-এর যুগ্ম সম্পাদক জন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিভ্রান্তি যে ছড়ায়— তা সত্যি। কিন্তু আমরা তো নিজেদের ইচ্ছে মতো যন্ত্র ব্যবহার করতে পারি না। অনুমোদিত যন্ত্রই ব্যবহার করি। তা হলে কেন এরকম হবে! আমরা পরিবহণ দফতরের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব। আর নজরদারি যত ইচ্ছে চালাক, আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’ তবে ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রের একাংশের মালিকেরা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, পরিবহণ দফতরের আরএসডি মেশিনের বৈধতা নিয়েই।