—প্রতীকী চিত্র।
সামাজিক মাধ্যমে দেদার লাইক, কমেন্ট করার প্রবণতা রয়েছে অনেকেরই। আর তাতেই এ বার লুকিয়ে সাইবার প্রতারণার ফাঁদ! আর সেই ফাঁদে পা দিলেই ব্যাঙ্কঅ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে নেট নাগরিকের! সামাজিক মাধ্যমে ‘লাইক’ করার প্রবণতার সুযোগ নিয়েই এমন নতুন ধরনের সাইবার প্রতারণার ছক কষছে চক্রীরা। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে লালবাজারের তরফে।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই নয়া প্রতারণার ফাঁদে টাকা খুইয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। শুরু হয়েছে তদন্ত। প্রাথমিক ভাবে এর পিছনে জামতাড়ার পাশাপাশি রাজস্থানের একাধিক গ্যাং যুক্ত বলেই মনে করছেন লালবাজারের তদন্তকারীরা।তবে এর পিছনে অন্য কোনও গ্যাং আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
কী ভাবে হচ্ছে এই প্রতারণা? পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতারণার প্রথম ধাপ হিসাবে সোশ্যালমিডিয়ায় একটি লাইক দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মোবাইলে আসছে আপাত-নিরীহ মেসেজ! ইউটিউবের ভিডিয়ো কিছু ক্ষণ দেখে শুধু ‘লাইক’ করলেই দেড়শো টাকা আয়ের প্রতিশ্রুতি! শুধু তা-ই নয়,সামাজিক মাধ্যমে একাধিক ভিডিয়ো লাইক করে প্রতিদিন বাড়ি বসে মোটা টাকা আয়ের সুযোগের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। ইউটিউবেরনাম করে মেসেজগুলি পাঠানো হচ্ছে। ভিডিয়ো ‘লাইক’ করার স্ক্রিনশট পাঠালেই লিঙ্ক পাঠিয়ে টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হচ্ছে। ওই মেসেজে জানানো হচ্ছে, এ ভাবেশুধু লাইক, কমেন্ট করেই দিনে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যেতে পারে। সেই ফাঁদে পা দিয়ে পর পর লাইক করলেই তাঁকে লিঙ্কপাঠানো হচ্ছে। আর তাতে ক্লিক করলেই অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে টাকা।
লালবাজারের সাইবার বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সাধারণ ভাবে এটা যেপ্রতারণা, তা দেখে বোঝার উপায় থাকছে না। সাধারণ একটি মেসেজের মতো করেই পাঠানো হচ্ছে। মেসেজে সম্মতি জানালে পর পর মোবাইলে ভিডিয়ো আসছে। সেখানে ‘লাইক’ করে কথামতো স্ক্রিনশটপাঠাচ্ছেন অনেকে। এর পরে টাকা পাওয়ায় আশায় অনেকেই ওই লিঙ্কে ক্লিক করে প্রতারণা শিকার হচ্ছেন।’’ গত মাসখানেক ধরে এই নতুন ধরনের সাইবার প্রতারণার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন আধিকারিকেরা। তবে এই ধরনের প্রতারণায় এখনও পর্যন্ত কতগুলি অভিযোগ জমা পড়েছে, সেই তথ্য লালবাজারের তরফে জানানো হয়নি।
শুধু ‘লাইক’-এর ফাঁদে ফেলা নয়, সম্প্রতি অ্যাকাউন্টে ‘সেভিংস চার্জ’ দেওয়ার নামে মেসেজকরেও প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন লালবাজারের কর্তারা। তা নিয়েও সতর্কতামূলক প্রচার চালাচ্ছে লালবাজার। সাইবার বিশেষজ্ঞদের একাংশ যদিওজানাচ্ছে, করোনার পর থেকে বাড়ি থেকে কাজ করার প্রবণতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের সামাজিক মাধ্যমে বেশি সময় কাটানোর প্রবণতাও বেড়েছে। সেই সুযোগে প্রতারণার ফাঁদ পাতছে সাইবার অপরাধীরা। সাইবার বিশেষজ্ঞসন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সবটাই পুরনো কায়দা। শুধুমাত্র রং-চং করে নতুন মোড়কে সামনে আনা হচ্ছে। অস্বাভাবিক কোনও কিছুতেই প্রতারণা ফাঁদ লুকিয়ে থাকতে পারে। সতর্ক না হলেই বিপদ।’’ লালবাজারের এক পুলিশ কর্তা বলেন,‘‘ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। কোথা থেকে এই সাইবার প্রতারণা করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর পাশাপাশিবিভিন্ন মাধ্যমে সচেতনতা প্রচারও চালানো হচ্ছে।’’