যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।—ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ‘ডোমিসাইল কোটা’ বা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষণ প্রয়োজন এবং সঙ্গত কি না, তা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। তারই মধ্যে বুধবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের বৈঠকে প্রস্তাব নেওয়া হল, বাংলার পড়ুয়াদের জন্য ৯০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত হোক। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে আলোচনা হবে। সেখানেই নেওয়া হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
বৈঠকের পরে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে এই প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এ বার কর্মসমিতিতে যাবে।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ইনস্টিটিউট অব এমিনেন্স’ খেতাবের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তকমা পেতে চলেছে যে-বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষণ সঙ্গত কি না, সেই প্রশ্নটিকে ঘিরেই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। বস্তুত, রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য সংরক্ষণ চালু করা কতটা যুক্তিযুক্ত, যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস নিজেও প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কর্মসমিতিতে আলোচনা হোক। আমার বক্তব্য সেখানে জানাব। কর্মসমিতিতে যে-সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেটাই চূড়ান্ত। যা হবে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হবে।’’
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৬টি বিভাগের মধ্যে ১৩টিই সংরক্ষণের পক্ষে সওয়াল করেছিল। প্রথমে সংরক্ষণ চেয়েছিল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। তার পরে ১২টি বিভাগ মত দেয়। তবে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন এবং পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকেরা জানান, বাংলার পড়ুয়াদের জন্য পৃথক সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষকেরা বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। এই পরিস্থিতিতেই এ দিনের বৈঠকে আলোচনাক্রমে রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য ৯০ শতাংশ সংরক্ষণের প্রস্তাব নেওয়া হয়।
‘‘আগে এই সংরক্ষণের নিয়ম ছিল যাদবপুরে। আশির দশকে তা উঠে যায়। বিহার, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ অনেক রাজ্যেই সরকার নিয়ন্ত্রিত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এমন সংরক্ষণ আছে। কোথাও কোথাও সংরক্ষণের হার ১০০ শতাংশ। এই পরিপ্রেক্ষিতে যাদবপুরেও এই সংরক্ষণের দাবি উঠছে,’’ বলেন চিরঞ্জীববাবু।
কল্যাণী সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মতো সরকার নিয়ন্ত্রিত ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানে এমন সংরক্ষণ আছে। এ রাজ্যের বাসিন্দা বলে জাল সার্টিফিকেট বার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অভিযোগও উঠেছে অতীতে। আইআইইএসটি শিবপুর এবং এনআইটি দুর্গাপুরেও এ রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য সংরক্ষণ রয়েছে।
চিরঞ্জীববাবু জানান, যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেলে বছরে টিউশন ফি হিসেবে ২০০০ টাকা দিতে হয় পড়ুয়াদের। রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তা পাওয়ায় অনেক ভর্তুকি দেওয়া যায়। তাই ভর্তির ক্ষেত্রে এই রাজ্যের পড়ুয়াদের গুরুত্ব দেওয়ার দাবি উঠেছে শিক্ষকদের মধ্য থেকে। ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টিতে এখন বেশ বড় সংখ্যায় পড়ছেন ভিন্ রাজ্যের পড়ুয়ারা। কোনও কোনও বিভাগে রাজ্যের পড়ুয়ার তুলনায় তাঁদের সংখ্যা বেশি। ডিন এ দিন জানান, প্রায় ৫০ শতাংশ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াই অন্য রাজ্যের। কোনও কোনও বিভাগে ভিন্ রাজ্যের পড়ুয়া বেশি। অভিযোগ, তাঁদের অনেকে ক্লাসে ভাল করে পড়া বুঝতে পারেন না। দু’-একটি ক্ষেত্রে হিন্দিতে পড়ানোর দাবিও তুলেছেন তাঁদের অনেকে। পরীক্ষার ফল ভাল নয় তাঁদের অনেকেরই। ক্যাম্পাসে নীতি-পুলিশগিরির সঙ্গেও তাঁদের কেউ কেউ যুক্ত বলে অভিযোগ।
ডিন এই বিষয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি জানান, কর্মসমিতিতে আলোচনার পরে বিষয়টি রাজ্য সরকারের কাছেও পাঠাতে হবে। ২০২০ থেকে সংরক্ষণ চালু করার দাবি উঠছে। তবে ওই বছরেই সেটা চালু করা যাবে কি না, তা নিয়ে ডিন সন্দিহান। ডোমিসাইল কোটায় কারা কারা পড়বেন, সেই বিষয়েও পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি।