অভিযোগ, ফের নাকি জারি হয়েছে ‘ঊর্ধ্বতনের নির্দেশ’! তাই হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা ওষুধ পেলেও ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। যার জেরে বিপদ বাড়ছে বলেই আশঙ্কা চিকিৎসকদের।
গত বছর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গি রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে দেরি হয়েছিল। যার জেরে রোগ ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি বেশ কিছু মৃত্যুও ঘটেছিল। প্রশাসনের তরফে রোগীদের প্রেসক্রিপশনে ‘ডেঙ্গি’ শব্দটা না লিখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগও উঠেছিল।
এ বার প্রথম থেকেই সতর্ক স্বাস্থ্য দফতর। কর্তারা জানিয়েছিলেন, কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে তাঁকে প্রথম থেকেই পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তবে সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি রোগীদের ভর্তি নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করতে ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের মৌখিক নির্দেশ।
এ বছর বর্ষা শুরু হতেই জ্বরের প্রকোপ বে়ড়েছে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা প্রতিদিনই ভিড় করছেন কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। শুধু শহর নয়, রোগীরা আসছেন আশপাশের জেলা থেকেও। সূত্রের খবর, জেলা থেকে আসা জ্বরে আক্রান্তদের ভর্তি না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, জেলা থেকে জ্বরে আক্রান্তেরা কলকাতার সরকারি হাসপাতালে এলে ওষুধ দিয়েই তাঁদের ফেরত পাঠাতে বলা হয়েছে। এমনকি, জেলার ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীদেরও ভর্তি নেওয়া যাবে না। তাই জেলা থেকে একাধিক ডেঙ্গি আক্রান্ত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর কিংবা এন আর এস হাসপাতালে এলেও তাঁদের শুধু ওষুধ নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। জেলার হাসপাতালে প্লেটলেটের আকাল রয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় ব্লাড ব্যাঙ্ক থাকলেও প্লেটলেট মেলে না। সেখানেও ডেঙ্গি আক্রান্তকে সংশ্লিষ্ট জেলার হাসপাতালেই ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের নির্দেশ, কলকাতার কোনও সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগীর ভিড় বাড়ানো চলবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি চিকিৎসকের কথায়, ‘‘প্রতি বছর ডেঙ্গির মরসুমে নিত্যনতুন ‘চিকিৎসা পদ্ধতি’ শিখছি। যদিও সেই শিক্ষায় রোগীদের বিপদ কমার বদলে বাড়ছে।’’ আর এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ভর্তি না নেওয়ায় রোগীদের পর্যবেক্ষণে রাখা যাচ্ছে না। জেলার রোগীরা তো রোজ কলকাতায় আসতে পারবেন না। ফলে বিপদ হতেই পারে! তখন কিন্তু চিকিৎসকের কাজ নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।’’ জেলার রোগীদের ভর্তি নিয়ে ফরমান জারি হলেও কলকাতার বাসিন্দাদের ভর্তি নিয়ে অবশ্য এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় প্লেটলেট ও পর্যবেক্ষণই সুস্থ করার উপায়। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর বিগত তিন বছরের অভিজ্ঞতায় সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তার পরেও রোগী ভর্তি নিয়ে এত জটিলতা হলে তা দুর্ভাগ্যজনক! প্রশাসনের একাংশ অবশ্য মনে করছে, তথ্য গোপনের জন্যই ভর্তি নিয়ে এই বাড়তি সতর্কতা। বিভিন্ন জেলার রোগীরা কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি হলে রোগের প্রকোপ প্রকাশ্যে আসার সুযোগ বেশি। কিন্তু শুধুমাত্র বহির্বিভাগে রোগী দেখলে তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে না।
যদিও স্বাস্থ্য ভবনের পাল্টা যুক্তিও রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শীর্ষ স্তরের স্বাস্থ্যকর্তা জানান, ডেঙ্গি নিয়ে প্রশাসন খুব সতর্ক। তাই মানুষের কথা ভেবেই সব পরিকল্পনা হয়েছে। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলির চাপ কমাতেই এই পরিকল্পনা।
আর এক শীর্ষ কর্তার কথায় ‘‘সমস্ত রোগের চিকিৎসাতেই জেলার হাসপাতালকে স্বনির্ভর করা হচ্ছে। ডেঙ্গির মতো রোগের ক্ষেত্রে সব স্তরের হাসপাতাল স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে তবেই রোগমুক্তি ঘটবে। তবে, রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও ভর্তি করা যাবে না, এমন নির্দেশ কোথাও নেই।’’