ফাইল চিত্র।
কোভিড সংক্রমণের আতঙ্ক আগের তুলনায় কমে গেলেও বাসে-ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা এখনও সেই তুলনায় বাড়েনি। কারণ, গণপরিবহণ ব্যবহার করার থেকে মানুষ বিকল্প মাধ্যমেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে নিয়েছেন। এ বার তাই গণপরিবহণে আগ্রহ ফেরাতে বিশেষ অ্যাপ তৈরি করল রাজ্য পরিবহণ নিগম। যার মাধ্যমে ঘর থেকেই দূরপাল্লার বাতানুকূল বাস, বিশেষ ট্রাম ও জলযানে ভ্রমণের টিকিট কাটা যাবে। এমনকি পুজোর সময়ে মণ্ডপ ঘুরতে বিশেষ বাস পরিষেবা বা গঙ্গাবক্ষে বিসর্জন দেখার জন্য ভেসেলে আসন সংরক্ষণের সুযোগও মিলবে একই অ্যাপ থেকে। তবে শহর থেকে প্রতিদিন স্বল্প দূরত্বের রুটে রাজ্য পরিবহণ নিগমের যে সব বাস চলে, তার টিকিট অ্যাপ থেকে কাটা যাবে না।
করোনা পর্বের ঘরবন্দি দশা কাটাতে অনেকেই একটু একটু করে বেরোতে চাইছেন। রাজ্য পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, কোথায়, কী ভাবে পৌঁছনো যাবে তা নিয়ে এখনও বেশির ভাগ মানুষের সংশয় থাকায় তাঁরা ব্যক্তিগত গাড়ি বা ভাড়ার গাড়ি ব্যবহার করছেন। কাছাকাছি গন্তব্যে পৌঁছনোর ক্ষেত্রেও ওই প্রবণতাই বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় গণপরিবহণে বিনোদনমূলক সফর এবং দূরপাল্লার বাতানুকূল ভলভো বাসের সফর যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিতে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন-ভার্সন ১.০’ নামের অ্যাপ তৈরি করেছে নিগম।
অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের গুগল প্লে-স্টোর থেকে সেটি ডাউনলোড করা যাচ্ছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে ওই অ্যাপ অ্যাপল স্টোরেও পাওয়া যাবে, জানাচ্ছেন সংস্থার আধিকারিকেরা। অ্যাপ ডাউনলোড করার পরে যাত্রীকে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। ওটিপি এবং পাসওয়ার্ডের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলেই নির্দিষ্ট অ্যাপটি থেকে যাত্রীরা বুক করতে পারবেন।
রাজ্য পরিবহণ নিগমের ওই অ্যাপের মাধ্যমে কলকাতা থেকে মায়াপুর, বিষ্ণুপুর, বোলপুর, সিউড়ি, জয়রামবাটী, বকখালি, বালুরঘাট, দিঘা, পুরুলিয়ার মতো দূরপাল্লার রুটে বাসের আসন বুক করা যাবে।
অ্যাপ থেকে বিভিন্ন রুটের বাতানুকূল ভলভো বাস ছাড়াও বারাসত, হাবরা, জোকা, শ্যামবাজার, করুণাময়ী, শ্রীরামপুর, নৈহাটি-সহ কয়েকটি স্ট্যান্ড থেকে দিঘাগামী বাসের আসনও বুক করা যাবে। কিন্তু স্বল্প দূরত্বের দৈনন্দিন যাত্রায় আসন সংরক্ষণ করা যাবে না। কারণ, ওই সব বাসে আসনের ক্রমিক সংখ্যা নেই। তাই অল্প দূরত্বের বাস আপাতত অ্যাপের আওতার বাইরে থাকছে।
‘পাটরানি’ ট্রামের টিকিট এখান থেকে বুক করা যাবে। ওই ট্রামের টিকিটের মূল্য ৯৯ টাকা। অন্যান্য বিশেষ ট্রামকেও এর আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। জলপথে হেরিটেজ রিভার ক্রুজ়, বোট লাইব্রেরি-সহ ভবিষ্যতে আরও যে সব বিশেষ লঞ্চ পরিষেবা শুরু হবে, তার আসন এই অ্যাপ থেকে সংরক্ষণ করা যাবে। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে জলপথে প্রমোদভ্রমণের পছন্দসই আসন সংরক্ষণ করা যাবে।
রাজ্য পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজনবীর সিংহ কপূর বলেন, “অনেক দিন ধরেই এই পরিকল্পনা কার্যকর করার চেষ্টা চলছিল। যাত্রীরা বাড়ি বসেই দূরপাল্লার বাসে যাতায়াত এবং ভ্রমণের
পরিকল্পনা করতে পারবেন।”
পরিবহণ নিগমের আধিকারিকদের মতে, অ্যাপের মাধ্যমে আগাম পরিষেবার হদিস যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে দূরপাল্লার বাসে যাতায়াতে মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে। তবে, এই অ্যাপ কোনও ভাবেই ‘পথদিশা’ অ্যাপের বিকল্প নয় বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। শহরে দৈনন্দিন যাতায়াতে সরকারি বাস কোথায়, কখন মিলবে― তা ‘পথদিশা’ অ্যাপ থেকেই জানা যাবে। নতুন তৈরি অ্যাপ থেকে রুটের বাসের অবস্থানের খোঁজ মিলবে না।