দশ বছরেও শিখলাম কই! বলছে নন্দরাম

সেটা ১৩ জানুয়ারি, ২০০৮। শনিবার মধ্যরাতের আগুন ছড়িয়ে পড়ার পরে নন্দরাম মার্কেট-কাশীরাম মার্কটের জোড়া বহুতল ঘিরে একটা উত্তাল রবিবার দেখেছিল বড়বাজার

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:১৩
Share:

সিঁদুরে মেঘ: বাগড়ি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে ফের প্রমাদ গুনছেন নন্দরাম মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক ও রণজিৎ নন্দী

ক্যানিং স্ট্রিটে অগ্নিধ্বস্ত বাগড়ি মার্কেট থেকে হাঁটা পথে বড়জোর আধ কিলোমিটার। রবিবারের ছুটিতে আপাত ভাবে থম মেরে রয়েছে বিশাল বহুতল। ঠিক এক দশক আগে যে বাড়ির আশপাশে টানা সপ্তাহখানেক ধরে কার্যত নাস্তানাবুদ হয়েছিল রাজ্য প্রশাসন।

Advertisement

সেটা ১৩ জানুয়ারি, ২০০৮। শনিবার মধ্যরাতের আগুন ছড়িয়ে পড়ার পরে নন্দরাম মার্কেট-কাশীরাম মার্কটের জোড়া বহুতল ঘিরে একটা উত্তাল রবিবার দেখেছিল ব়ড়বাজার। এক দশক বাদে রাজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও কিন্তু পাল্টায়নি বড়বাজারের ছবিটা। বিপর্যয় থেকে ঠেকে শেখা বা শিখতে বাধ্য হওয়া নন্দরাম মার্কেটও সে-বিষয়ে একমত।

‘‘কষ্টটা কোথায় জানেন, ইতিহাস থেকে আমরা কিছু শিক্ষা নিলাম না!’’— বলছিলেন বহুতলের বিপর্যয় মোকাবিলা কমিটির সদস্য তথা নন্দরামের ব্যবসায়ী অশোক সান্থালিয়া। দশ বছর আগের ধাক্কার জেরে পাঁচ বছর ঝাঁপ বন্ধ ছিল নন্দরামের। এর পরে আগুন মোকাবিলায় নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ঠারেঠোরে মানছেন, সেই এক বারই আগুন নেভানোর সরঞ্জাম নিয়ে মহড়া হয়েছিল। হঠাৎ বিপদে দেওয়ালের আস্তরণ ভেঙে জলের তোড়ে আগুন নেভানোর স্প্রিঙ্কলার কেমন কাজ করবে, তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে তাঁদের। সেই সঙ্গে আশঙ্কার আঁচ নন্দরামের পাশেই ত্রিপলপট্টি ঘিরে। ১৩ তলার অফিসঘরে বসে বহুতলের ম্যানেজার কিষাণলাল শর্মা বললেন, ‘‘সে বার কিন্তু আগুনটা আসলে ছড়িয়েছিল ত্রিপলপট্টি থেকেই। ওই গলির চেহারা এতটুকু পাল্টায়নি। আবার বিপদে এত চেষ্টা করেও রেহাই পাব তো আমরা?’’

Advertisement

তবে প্রশাসন বলছে, দশ বছরে অনেক চেষ্টাও করেছে নন্দরাম। অশোকবাবু জোর গলায় বলছেন, ‘‘প্রতিটি তলে জলের জোগান রয়েছে।’’ নন্দরামের মালিক মানিকচাঁদ শেট্টিয়া নিউ আলিপুরের বাড়ি থেকে বড়বাজারে চলে এসেছেন ছুটির দিনে। তাঁর দাবি, নন্দরামের ছাদে দু’টি জলাধারে ৫০ হাজার লিটার করে জল মজুত রয়েছে সারা ক্ষণ। কাছেই বাগড়ি মার্কেটের আগুনে জল দিয়ে তাঁরা সাহায্যও করেছেন। অশোক সান্থালিয়ার মনে পড়ছে, দশ বছর আগে বহুতলটির পাঁচতলার উপরে আগুনকে বাগে আনতে দিশাহারা হয়ে পড়ে দমকল। তখন দমকলের ছিল না যন্ত্রচালিত উঁচু মই। ধোঁয়ার সমুদ্র ঠেলে, সবেধন নীলমণি সিঁড়ি দিয়ে ভিতরে ঢোকাও দমকলকর্মীদের জন্য কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: নজরদার কমিটির নজর নিয়েই প্রশ্ন

দশ বছর বাদে সেই সমস্যাগুলো শুধরানোর কিছু চেষ্টা অবশ্যই হয়েছে। তখন নন্দরাম ও কাশীরাম মার্কেটে মাত্র একটি করে সিঁড়ি। স্রেফ দোতলা ও ছ’তলায় এক বহুতল থেকে অন্যটিতে যাওয়ার সংযোগ। এখন নন্দরামে একাধিক সিঁড়ি ছাড়াও দু’টি বহুতলের প্রতিটি তলই পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী কমিটির দাবি, আগুনের সময়ে পাম্পে জল সরবরাহে অসুবিধা হতে পারে বলে বহুতলের বাইরেও এখন মজুত একটি জেনারেটর। কিন্তু, আশঙ্কা পিছু ছাড়ছে না। বহুতলের মালিক মানিকচাঁদ শেট্টিয়াও বলছেন, ‘‘বড় আগুন হলে ভগবানই ভরসা।’’ পাশের পাড়া ক্যানিং স্ট্রিটের বাগড়ি মার্কেটের ভিতরে ঢুকতে বা জল খুঁজতে দমকল হয়রান হচ্ছে দেখে ব্যবসায়ীরা থেকে থেকেই বলছিলেন, দশ বছরে কিচ্ছু পাল্টাল না।

ইলাহাবাদের ছেলে বিনোদ তিওয়ারি নন্দরামের ১২ তলায় বাবার দোকান সামলাচ্ছেন বছর পনেরো। সে-বার সব পুড়ে যেতে দেখেছেন চোখের সামনে। ৩৭ বছরের যুবক বললেন, ‘‘এক বার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। বার বার পারব বলে মনে হয় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement