এমপিএসের এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সিবিআই এবং ইডি।
আগুন লাগিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছিল চিটফান্ড সংস্থা এমপিএসের নথি। ঘটনার প্রায় সাত দিন পর এমনটাই প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসছে বলে ইঙ্গিত তদন্তকারীদের। এমপিএসের এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই নথি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হয়েছে দুই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং সিবিআই।
ঘটনার সূত্রপাত ৭ অক্টোবর দুর্গাপুজোর নবমীর সকালে। লেকটাউনে পি-১৬৬ ঠিকানায় যে তিনতলা বাড়িটি এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি-র সদর দফতর ছিল, সেখানে আগুন লাগে। ওই বাড়িতেই রয়েছে এমপিএসের প্রচুর পরিমান নথি, যা তদন্তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাড়িটি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এস তালুকদার কমিটির তদারকিতে ছিল। ২০১৮ সালে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশে এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি-র ১৮টি স্থাবর সম্পত্তি নিলামের নির্দেশ দিলে গত এপ্রিল মাসে ওই বাড়িটি কেনেন রতন সাহা নামে কলকাতার এক বাসিন্দা।নবমীর দিন সকালে রতনবাবুই প্রথম আগুনের খবর পান। ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সোমবার বলেন, ‘‘এপ্রিল মাসে ওই বাড়ি কেনা হলেও, সেখানে এমপিএসের প্রচুর আসবাব থেকে শুরু করে নথিপত্র এবং বিভিন্ন ধরনের অস্থাবর সম্পত্তি রয়ে গিয়েছিল। গত প্রায় তিন মাস ধরে সেই সমস্ত জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তদারকির দায়িত্বে থাকা তালুকদার কমিটি। কিন্তু এখনও প্রচুর নথি থাকায় বাড়ির চাবি দেওয়া ছিল কমিটির কাছেই।”
আরও পড়ুন-ছেলেকে দেখতে গিয়ে স্বামীর হাতে খুন স্ত্রী
আরও পড়ুন-মারধরের জেরে নিহত যুবক, ধৃত এক জন
তিনি আরও জানান, ওই দিন সকালে পাশের বাড়ির এক নিরাপত্তারক্ষী তাঁকে প্রথম ফোনে আগুনের কথা জানান। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ তিনি খবর পাওয়ার পরই স্থানীয় কাউন্সিলর, পুলিশ এবং দমকলকে ফোন করেন। রতনবাবু জানিয়েছেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটি জানান বিচারপতি তালুকদার কমিটির সহসচিব নকুলচন্দ্র চাকিকেও।দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।
নকুলবাবু ফোনে বলেন, ‘‘আমি খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে তালা খুলে ওপরে যাই। ওপরের তলায় একটি অ্যান্টি চেম্বারের মতো ছোট্ট ঘরে আগুন লেগেছিল। আগুনে কিছু নথিপত্র নষ্ট হয়েছে। তবে আরও একটু দেরি হলে বড় ক্ষতি হত। সমস্ত নথি নষ্ট হতে পারত।” ঘটনাস্থল ঘুরে নকুলবাবুর অভিযোগ,‘‘ এটা অন্তর্ঘাত। কারণ ওই বাড়ি তালা বন্ধ থাকে। বিদ্যুতের লাইনও কাটা। শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার সম্ভবনা নেই। কেউ আগুন না লাগালে ওই জায়গায় আগুন লাগা সম্ভব নয়।”
নাশকতা মনে হওয়ার পরই তালুকদার কমিটির পক্ষ থেকে গোটা ঘটনা সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিককে জানানো হয়। সিবিআইয়ের পরামর্শেই লেকটাউন থানায় এফআইআর দায়ের করেন নকুলচন্দ্র চাকি। লেকটাউন থানা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৩৫ ধারায় মামলা দায়ের করে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
তবে এমপিএসের এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সিবিআই এবং ইডি। তাঁরা মনে করছেন, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। তাই বিভিন্ন চিট-ফান্ড সংস্থার যে নথি বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে তার নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে চিঠিও দেওয়া হবে খবর সিবিআই সূত্রে।