‘মুসলিমকে ভাড়া দিই না!’ শহরে বাসা খুঁজছেন যাদবপুরের ছাত্রী

যাদবপুর ও আশপাশের এলাকায় মাঝেমধ্যেই এমন বৈষম্যের অভিযোগ ওঠে। এলাকার এক দালালের অবশ্য মত, সকলে নন, কেউ কেউ মুসলিমদের ভাড়া দিতে চান না।

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৪
Share:

প্রতীকী চিত্র

অঙ্কে ১০০-য় ১০০। উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৭.৪% নম্বর। ভর্তি হয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে।

Advertisement

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকার জন্য খোঁজখবর করতে গিয়ে অপমানিত নিশাত রিমা লস্কর। কারণ, তাঁর নাম শুনেই প্রথম প্রশ্ন, ‘‘মুসলিম? মুসলিমকে ঘর ভাড়া দিই না।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর-মজিলপুরের তরুণীটি বলছেন, ‘‘গ্রামে যে ব্যবহার পাইনি, শহরে এসে তা পেলাম।’’

কলকাতায় মুসলিমদের ঘর ভাড়া দেওয়া নিয়ে বাসিন্দাদের একাংশের ছুতমার্গ নতুন নয়। সেই কাহিনিতে সাম্প্রতিক সংযোজন নিশাত। তাঁর ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে ১ অগস্ট থেকে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ঘর দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে ১৫ অগস্টের পর। সে কারণে, ‘পেয়িং গেস্ট’ থাকতে চেয়েছিলেন নিশাত।

Advertisement

নিশাতের বাবা, পেশায় ছোট ব্যবসায়ী ইকতিয়ার শুক্রবার বলেন, ‘‘অনলাইন সাইট থেকে বাড়ির সন্ধান পেয়ে সুলেখা এলাকায় গিয়েছিলাম। বাড়ি পছন্দ হয়। জানিয়ে আসি, পরের দিন মেয়েকে নিয়ে আসব।’’ কিন্তু মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার আগে ফোন করলে গৃহকর্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘মেয়ের নাম কী?’ ইকতিয়ার মেয়ের নাম জানালে উত্তর আসে, ‘মুসলিম? কোনও মুসলিমকে ঘর ভাড়া দিই না।’ ইকতিয়ার বলেন, ‘‘আমার জেদ চেপে যায়। মেয়েকে নিয়ে চলে যাই ওখানে। ভদ্রমহিলা আমাদের ঘরে ঢুকতেই দেননি। আমি তখন বলি, ধরুন আপনার এক প্রতিবেশী হিন্দু কিন্তু দুষ্টু। আর এক জন প্রতিবেশী ভাল, মুসলিম। কাকে আপনি ঘরের চাবি দিয়ে যাবেন? উনি উত্তর দেননি।’’ সদ্য স্কুল পেরোনো নিশাত বলেন, ‘‘বাবা খুব চেষ্টা করছিল, ভদ্রমহিলাকে বোঝাতে। উনি বুঝতে চাইছিলেন না। কী করব! বাবাকে নিয়ে চলে এলাম।’’

গাঙ্গুলিবাগান এলাকাতেও ঘরের সন্ধান পেয়েছিলেন ইকতিয়ার। সেখানে টাকাপয়সা নিয়ে চূড়ান্ত কথাও হয়ে যায়। ইকতিয়ার বলেন, ‘‘সব ঠিক হওয়ার পরে আমার নাম শুনে গৃহকর্ত্রী বেঁকে বসেন। বলেন, মুসলিমকে বাড়িতে রাখতে পারবেন না। এ-ও বলেন, আমার কথা শুনে তো মুসলিম মনে হয় না।’’

আরও পড়ুন: তালিকায় ফের জট যাদবপুরে

যাদবপুর ও আশপাশের এলাকায় মাঝেমধ্যেই এমন বৈষম্যের অভিযোগ ওঠে। এলাকার এক দালালের অবশ্য মত, সকলে নন, কেউ কেউ মুসলিমদের ভাড়া দিতে চান না। এক ধরনের সন্দেহ এর পিছনে কাজ করে! আর সেই সন্দেহের বশে কলকাতার ‘অতিথি’ হতে পারেননি নিশাত। ক্লাস করতে জয়নগর থেকে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দৈনিক ট্রেনযাত্রা চলেছে তাঁর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement