নাগরিক পরিষেবায় নজরদারিতে এ বার বিশেষ বাহিনী নামাচ্ছে হাওড়া পুরসভা। ‘মেয়রস কপ’ নামে এই বাহিনীতে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হবে এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদের। বেতন সাধারণ কর্মীদের জন্য মাসে ৮ হাজার টাকা, সুপারভাইজারদের ১০ হাজার টাকা। আপাতত ১৫০ জন নিয়ে এই বাহিনী শুরু হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। অনেকের মতে, এটি আসলে নতুন কায়দায় চাকরি দেওয়ার অছিলা। যার লক্ষ্য তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক শক্ত করা।
মেয়র রথীন চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘নাগরিক পরিষেবা নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। এ জন্য নিজস্ব কিছু লোকজনের প্রয়োজন ছিল, যাঁরা আন্তরিক ভাবে শহরের উন্নয়নের কাজে সাহায্য করবেন। এ কারণেই ‘মেয়রস্ কপ’ তৈরি হচ্ছে। এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।’’
হাওড়ার তৃণমূল বোর্ডের এই নিজস্ব বাহিনী সাহায্য করবেন সিটি পুলিশকেও। পুরসভা সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই হাল্কা বাদামি রঙা পোশাকে ‘হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন মেয়রস্ কপ’ লেখা ব্যাজ আঁটা ওই যুবক-যুবতীদের দেখা যাবে হাওড়া শহরের রাস্তায়। পুরকর্তাদের বক্তব্য, হাওড়ায় ওয়ার্ড ৫০টি, এলাকাও অনেক বড়। এতগুলি ওয়ার্ডের অলিগলিতে নিত্যদিন নানা সমস্যা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পরিকাঠামো ও কর্মীর অভাবে নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার খবরই পৌঁছয় না পুরসভায়। এ দিকে, রাজ্য সরকার অনুমতি না দেওয়ায় পুরসভায় এখন স্থায়ী কর্মী নিয়োগ সম্ভব নয়। তাই পরিষেবার উন্নতির জন্য মুম্বই ও পুণের ধাঁচে অস্থায়ী কর্মী নিয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের সাহায্যে পুরসভার এই নিজস্ব বাহিনী তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। সিটি পুলিশের সঙ্গে ট্রাফিক সামলানোর পাশাপাশি রাস্তাঘাট, পানীয় জল, আলো, মহিলা ও শিশুদের সুরক্ষা, মিড-ডে মিলে নজরদারি এবং বিভিন্ন স্কুলের সামনেও নজরদারি চালাবে এই বাহিনী। কোনও সমস্যা হলেই খবর দেবে এলাকার সুপারভাইজারকে।
মেয়র জানান, প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে তিন জন করে কর্মী নিয়োগ করা হবে। এই তিন জনের মধ্যেই এক জন হবেন সুপারভাইজার। তাঁর মাসিক বেতন হবে ১০ হাজার টাকা। বাকি দু’জন পাবেন মাসে ৮ হাজার করে। সাইকেল বা মোটরবাইকে শহরে ঘুরে বেড়াবেন তাঁরা। মেয়র বলেন, ‘‘এর জন্য ১৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেবে হাওড়া সিটি পুলিশ। প্রশিক্ষণের পরে কাজে যোগ দেবেন তাঁরা। কাজে কোনও সমস্যা হলে সিটি পুলিশ তাঁদের সাহায্য করবে।’’
কর্মসংস্থানের এই আচমকা উদ্যোগে অবশ্য অন্য অভিসন্ধি দেখছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, আগামী বিধানসভা ভোটের দিকে লক্ষ রেখেই এত লোককে চাকরি দেওয়ার নাটক করছেন তৃণমূল পুরকর্তারা। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর আশরফ জাভেদ বলেন, ‘‘উদ্দেশ্য মহৎ হলেও এ সবই ভোটের আগে তৃণমূলের চমক। ভোট মিটে গেলে চাকরিও চলে যাবে।’’ একই অভিযোগ ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর অনিতা সিংহেরও। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবেই গত দেড় বছরে পুরসভায় বেআইনি ভাবে নিজেদের প্রায় তিন হাজার কর্মীকে চাকরি দিয়েছে তৃণমূল। এ বারও এই বাহিনী গড়া হচ্ছে ভোটের দিকে লক্ষ রেখে।’’ যদিও বিরোধীদের অভিযোগ মানতে নারাজ পুরকর্তারা। তাঁদের দাবি, সব নিয়ম মেনে পরীক্ষা নিয়েই চাকরিতে নেওয়া হবে। মূলত শহরের উন্নয়নে এই বাহিনী গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, নির্বাচনের দিকে লক্ষ রেখে নয়।
প্রশ্ন উঠেছে, মাসে এত টাকা বেতন না দিয়ে এ সব কাজের জন্য কোনও প্রশিক্ষিত বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হল না কেন?
মেয়রের জবাব, ‘‘দেওয়া হয়নি দু’টি কারণে। প্রথমত, কোনও বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দিলে প্রতি মাসে তারা অনেক বেশি টাকা চাইত। দ্বিতীয়ত, পুরসভা নিজের মতো ওই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না।’’