‘টক টু মেয়র’-এ ফিরহাদ হাকিম।—ফাইল চিত্র।
সামনে পুর ভোট। সে কথা মাথায় রেখে আরও এক বার সরাসরি নাগরিকদের কাছে পৌঁছতে চাইছে পুরসভা। সেই লক্ষ্যেই এ বার মধ্যরাতেও নাগরিকদের অভিযোগ শুনতে বিশেষ পরিকল্পনা করছেন পুর কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই শুধু নয়, নাগরিকেরা যাতে নিজেদের সমস্যার কথা মধ্যরাত অথবা গভীর রাতেও ফোনের মাধ্যমে পুরসভার কানে তুলতে পারেন, সে জন্যেই এই ভাবনা। বিল্ডিং সংক্রান্ত অভিযোগ হোক অথবা জঞ্জাল জমা বা নিকাশি সংক্রান্ত সমস্যা— যে কোনও পুর পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগ যাতে জানাতে পারেন নাগরিকেরা, তার জন্য ২৪X৭ ফোন পরিষেবা চালু করতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। গভীর রাতে নাগরিকদের সেই ফোন ধরতে কোন আধিকারিকের কবে ‘ডিউটি’ পড়বে, তা নিয়েও প্রাথমিক খসড়া তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টাই নাগরিকেরা নিজেদের সমস্যার কথা যাতে জানাতে পারেন, সেই মতো পরিকল্পনা করছি। নাগরিকেরা সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল বা আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে যাতে নিজেদের সমস্যা জানাতে পারেন, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। কবে এই ব্যবস্থা চালু করা যায়, তা দেখছি।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, নতুন এই পরিকল্পনায় কোনও নাগরিক ফোন করলে টেলি-অপারেটিং ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রথমে জানতে চাওয়া হবে কোন দফতর সংক্রান্ত সমস্যা বা অভিযোগ জানাতে চাইছেন। সেই অনুযায়ী ফোনের নম্বর টিপতে বলা হবে তাঁকে। সংশ্লিষ্ট নম্বরটি জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই সেই ফোন চলে যাবে সংশ্লিষ্ট দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল বা আধিকারিকের কাছে। তখন তাঁকেই সরাসরি নিজের অভিযোগ জানাতে পারবেন কোনও নাগরিক, তা সে দিন বা রাতের যে সময়েই হোক! এ জন্য আধিকারিকদের নতুন ডিউটির খসড়াও তৈরি করা হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। পুর কমিশনারের কথায়, ‘‘রাতে অভিযোগ শোনার জন্য আধিকারিকদের ডিউটি-তালিকাও তৈরি করা হবে।’’
বর্তমানে পুরসভার দিন-রাতের একটি কন্ট্রোল রুম আছে, যেখানে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ফোন করতে পারেন নাগরিকেরা। কিন্তু নতুন এই ব্যবস্থায় যে কোনও সময়ে পুর আধিকারিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ থাকছে। টেলিকম সংস্থাগুলি গ্রাহকদের সঙ্গে যে ব্যবস্থার মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে বা অভাব অভিযোগ শোনে, সেই একই ‘মডেল’ এ বার এখানে চালু করতে চাইছে পুরসভা।
প্রসঙ্গত, নাগরিকদের সমস্যা সরাসরি জানতে ইতিমধ্যেই পুরসভার তরফে ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচি চালু হয়েছে। যেখানে ফোন করে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে সরাসরি নিজেদের অভিযোগ জানাতে পারছেন নাগরিকেরা। কিন্তু এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, আগামী বছর পুরভোট এবং তার পরের বছরে বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে রাজনৈতিক কারণেই এইসব নতুন নতুন পদক্ষেপ করছেন পুর কর্তৃপক্ষ। প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘পুরোটাই রাজনৈতিক নাটক। কাজ করছি সেটা আবার দেখিয়ে করতে হবে না কি! রাজনৈতিক চাপে পড়ে এখন এসব করছে তৃণমূল পুরবোর্ড।’’ প্রায় একই সুর বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিতের গলাতেও— ‘‘ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে এখন পুরসভা এসব করছে। লোক দেখানো নাটক এসব!’’
পুরসভার এই নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েও কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়ের সতর্কবার্তা, ‘‘এই প্রথম পুরসভা সরাসরি নাগরিকদের কথা শুনছে। সেটা নিশ্চয়ই স্বাগত। কিন্তু শুধু শুনলেই হবে না, কাজ যাতে হয়, সেটা দেখতে হবে।’’